আরভিন্দ শ্রীনিবাস : মধ্যবিত্ত ঘর থেকে গুগলের রাজসিংহাসনে কাঁপন – Perplexity AI’র অনন্য বিপ্লব


অধ্যায় ১: কে এই আরভিন্দ শ্রীনিবাস?


দুই দশক ধরে সার্চ ইঞ্জিনের দুনিয়ায় গুগল ছিল একচ্ছত্র অধিপতি। মাইক্রোসফটের Bing চ্যালেঞ্জ করেও পারেনি তাকে টলাতে। কিন্তু একজন ভারতীয় তরুণ, আরভিন্দ শ্রীনিবাস, মাত্র দু’বছরে সেই গুগলের ভিত কাঁপিয়ে দিলেন।

চেন্নাইয়ের মধ্যবিত্ত তামিল পরিবারে জন্ম, IIT-মাদ্রাজে পড়াশোনা, তারপর UC Berkeley-তে পিএইচডি—সেই যাত্রার পরিণতি Perplexity AI, একটি কোম্পানি যার ভ্যালুয়েশন এখন ১৮ বিলিয়ন ডলার!

আরভিন্দ আজ গড়েছেন এমন এক সার্চ প্ল্যাটফর্ম, যা কেবল তথ্য দেয় না—ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলে, ব্যাখ্যা করে, উৎস দেয়। এটাই ভবিষ্যতের সার্চ!


অধ্যায় ২: আট বছরের ছেলের চোখে আইআইটি‑মাদ্রাজ

"একদিন তুই ওই বিল্ডিং-এ পড়বি!"

ধুলোমাখা চেন্নাই শহরের দুপুর। বাসে জানালার পাশে বসে ৮ বছরের আরভিন্দ তাকিয়ে থাকত লাল ইটের আইআইটি মাদ্রাজ ভবনের দিকে। মা আঙুল তুলে বলতেন—“ওটাই তোর ভবিষ্যৎ।” সেই কথায় জন্ম নিয়েছিল স্বপ্ন এবং দায়িত্ব।


অধ্যায় ৩: পুঁজি বলতে কৌতূহল

১৯৯৪ সালে জন্ম। বাড়িতে কম্পিউটার ছিল না। পুরোনো স্কুটার আর স্টেশনের ম্যাগাজিন থেকে মডেল বানাত। হাতে-কলমে শিখতে ভালবাসত। সবকিছু নিজে তৈরি করত, নিজে বুঝত—এই ছিল তার প্রাথমিক শিক্ষা। একেবারে প্রকৃত ‘Born Engineer’!


অধ্যায় ৪: আইআইটি‑মাদ্রাজ—রক্ত, ঘাম আর পাইথনের জেদ

২০১১ সালে আইআইটি‑মাদ্রাজে ভর্তি। হোস্টেলের ঘরে চুঁইয়ে জল, স্যাঁতসেঁতে দেয়াল। পরিবারের পক্ষে খরচ চালানো অসম্ভব। তাই টিউশনি করতেন, দিনে ক্লাস, রাতে ল্যাব।

  • প্রথম ধাক্কা: ক্যালকুলাস টেস্টে ফেল। সিদ্ধান্ত: “জাভা নয়, পাইথনই হবে আমার ভাষা।”

  • দ্বিতীয় ধাক্কা: প্রফেসর বললেন, “ডেটা ছাড়া আইডিয়া মূল্যহীন।” Kaggle থেকে ডেটা নামিয়ে কাজ শুরু।

  • শেষে আশার আলো: Amazon EC2-তে চালান প্রথম AI মডেল—হোস্টেলের লাইট নিভে যাওয়ার পর, চাদরের নিচে ল্যাপটপের নীল আলোয়।

পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ে গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের ভিত্তি।


অধ্যায় ৫: ক্যালিফোর্নিয়া ড্রিম—UC Berkeley

২০১৬ সালে ফুল-ফান্ডেড পিএইচডি অফার পেয়ে পৌঁছালেন বার্কলেতে। 

খরচ চালাতে TA-শিপ

স্টুডেন্ট ভিসার সীমাবদ্ধতা

ক্লাসে শিক্ষকের সঙ্গে ‘I disagree’ বলা—সংস্কৃতির ধাক্কা

২টি গবেষণা পেপার বাতিল

৩য় পেপার ICLR-এ জায়গা পায়—বারো ঘণ্টা কোড আর চার লিটার কফির পর

“ভারতের মাটি থেকে আন্তর্জাতিক গবেষণার রিংয়ে নামতে হলে মানের সাথে কোনও আপস চলে না।” – আরভিন্দ


অধ্যায় ৬: লন্ডনের ইঁদুর আর রাতের লাইব্রেরি

২০১৯ সালের গ্রীষ্মে DeepMind-এর ইন্টার্নশিপে লন্ডন। বাসস্থান এমন ছিল যেখানে ইঁদুরে ঘুমাতে পারতেন না, লাইব্রেরির সোফাই ছিল তার বিছানা।

সন্ধ্যার পর Whiteboard-এ Transformer মডেল ভাঙতেন, কোড অপ্টিমাইজ করতেন।
একদিন তার কোডে latency কমে ২০ মিলিসেকেন্ড—তাতেই টিম লিডের চোখে পড়ে গেলেন!


অধ্যায় ৭: Perplexity AI—যেখান থেকে ইতিহাস শুরু

২০২২ সালে ডেনিস, জনি, অ্যান্ডির সাথে Zoom কলে আলোচনায় উঠে এল—"Why not redefine Search?"

ভাষা মডেলের "Perplexity" থেকে কোম্পানির নাম

গ্যারাজে অফিস

আরভিন্দ নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সার্ভার চালাতেন

প্রাথমিক মডেল টেস্ট হতো রাতে, GPU ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে

লক্ষ্য ছিল একটাই: লিংক নয়, সরাসরি উত্তর—সূত্রসহ।


অধ্যায় ৮: গুগলের ভিত কাঁপানো এক সকাল

২০২৪ সালের শেষ দিকে Perplexity AI-এর সার্ভারে হঠাৎ করে সার্চ কুয়েরি ১০ গুণ বেড়ে যায়।
গুগলের এক সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার টুইট করেন—

“UI আমার পছন্দ নয়, কিন্তু রেজাল্ট দ্রুত ও নির্ভুল।”

Mount View অফিসে গুগলের ইমার্জেন্সি মিটিং—বিশ্ব বুঝে যায়, গুগল এখন ভয় পাচ্ছে।


অধ্যায় ৯: এক ভারতীয় তরুণ, এক কোম্পানি, দেড় লাখ কোটি টাকার ঝড়

এক বছরের মধ্যে SoftBank, Nvidia, Jeff Bezos সহ অনেক বিনিয়োগকারী ঢুকে পড়েন। কোম্পানির ভ্যালুয়েশন পৌঁছায় ১৮ বিলিয়ন ডলার
আরভিন্দ নিজেই তখন ৫০,০০০ কোটি টাকার মালিক। অথচ জীবন শুরু হয়েছিল চেন্নাইয়ের ধুলোমাখা বাসে, পুরনো স্কুটার আর ইঁদুরে ভরা কামরায়।


উপসংহার: ইতিহাস লেখে যারা থামে না

আরভিন্দ শ্রীনিবাস প্রমাণ করে দিয়েছেন—স্বপ্ন, সাহস ও শ্রম থাকলে সব বাধা পেরোনো যায়।
যে তরুণ ছাত্র আইআইটি হোস্টেলে রাত জেগে কোড করত, যার টাকায় পরার সামর্থ ছিল না—সে আজ বিশ্বের প্রযুক্তি-যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

📝 ইতিহাস তাঁরা লেখে যারা পালায় না—যারা দাঁড়িয়ে লড়াই করে।
🛠️ আর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.