AN ASTROLOGER'S DAY

 AN ASTROLOGER'S DAY by R.K. Narayan





About the Author : 

Name: Rasipuram Krishnaswami lyer Narayanaswami

Birth: October 10, 1906 in Madras (now known as Chennai)

Nationality:    Indian

Education: Lutheran Mission School, Christian College High School, Maharaja College of Mysore, University of Mysore.

Genre: Fiction, mythology and non-fiction.

Acclaimed for: Making India accessible to the outside world through his literature.

Regarded as: One of the three leading  English language Indian fiction writers along with Mulk Raj Anand and Raja Rao.

Writing technique: Simple, realistic with a natural element of humour. He highlights the social context and everyday life of his characters. He created a fictional town called 'Malgudi' for his novels and short stories.

Compared to : Anton Chekhov (Russian
playwright and short story writer), William Faulkner (American writer and Nobel Prize laureate) and Guy de Maupassant (French Writer, master of the short story form)

Celebrated Works: Semi-autobiographical trilogy 'Swami and Friends', 'The Bachelor of Arts', 'The English Teacher', 'The Financial Expert' and 'The Guide'.

Awards and Honours: Sahitya Akademi Award (1958), Filmfare Award for the best story ('The Guide'), Padma Bhushan (1964), AC Benson Medal (1980), Padma Vibhushan (2001). Honorary doctorates by the University of Leeds (1967), Delhi University (1973), The University of Mysore (1976). Nominated to the upper house of the Indian Parliament (Rajya Sabha). He has been nominated for the Nobel Prize in Literature multiple times.

Renowned Family Member : RK Laxman (brother), the famous Indian cartoonist, illustrator and humorist.

Death: May 13, 2001 in Chennai, Tamil Nadu at the age of 94.

Famous Quote: "Life is about making right things and going on".

Summary : 

'An Astrologer's Day' by RK Narayan centres around a day in the professional life of a man posing as an astrologer. In a bustling marketplace filled with various goods, a fake astrologer sets up his shop under a spreading tamarind tree near the Town Hall Park. The narrative starts at noon and extends well into nightfall. From midday the astrologer opens his business with equipment like cowrie shells, palmyra writings etc. His face is heavily made up to trap customers. His forehead is painted with vermilion and sacred ash. His eyes between his painted forehead and dark whiskers seem prominent and piercing. He dons a saffron turban and the colour combination of orange, red, ash and black used in his getup have an impact on the passersby and lures them to him. Besides, the gleam in his eyes as he searches for prospective customers is interpreted as the power of having an insight into the future. Thus people thronged around him as bees to cosmos or dahlia stalks.  

In the market there are different vendors, each shouting about his wares. Medicine sellers promise to cure through the magic of their medicines, an auctioneer offers cheap cloth, shopkeepers with stolen hardware try to entice customers and magicians assure a view of different world. But the noisiest of them all is the groundnut seller who sells his ware by calling them with different fancy names like 'Bombay Ice-Cream', 'Delhi Almond' and 'Raja's Delicacy'. 

The marketplace is denied municipal lights and the shops are lit by naked flares on poles, gaslights, cycle lamps arranged by the vendor themselves. The astrologer takes his position beside the groundnut seller and transacts his business by the light of a flare that smokes up above the groundnut heap. The entire place is submerged into half light and half darkness. That 'bewildering criss-cross' of light and shadow suits the astrologer's business very well who resorts to lies in his prediction. The astrologer has fled far away from his village abandoning his forefathers' profession of farming. He has never nurtured the intention of being an astrologer. Yet he pleases everyone mainly because he tells them things they want to hear. Actually he is aware of the general problems like marriage, money and relationships that trouble families. He allows his clients to speak continuously for ten minutes and he makes shrewd guesses about the customers based on that.
As evening falls, the nuts-vendor extinguishes the flare which is a signal for the astrologer to wind up too. At this moment he observes a prospective client. Eager to earn a bit more money, he comments that the stranger looked troubled and can have a chat with him. At first, the stranger expresses his doubt about the astrologer's abilities. After much bargaining, it is decided that the stranger will provide eight annas if he gets a satisfactory answer, otherwise the astrologer would have to pay twice as much.
As the stranger lights a cheroot, by the matchlight the astrologer identifies him as the man whom he had tried to murder. So he denies to take up any challenge and asks him to come back the next day. But the man restrains him and forces him to answer his question, whether he would be successful in his quest or not.    Then the astrologer starts to tell about the stranger's past that he was once stabbed by a man and pushed into a well and left to die there. He is told that his murderer has died four months ago. Then the astrologer warns him not to leave home as it will mean sure death for him. The stranger whose name is Guru Nayak, pays the astrologer and goes back home.

The astrologer picks up his things and heads home and hands the coins given by the man to his wife. She feels overjoyed as she can buy jaggery and coconut to make sweets with that money. After dinner the astrologer reveals to his wife his past life and the circumstances that forced him to leave his village. His wife is shocked but the astrologer assures her that he has not killed anyone and need not bear the burden of guilt anymore. He can enjoy a peaceful sleep.

আর. কে. নারায়ণের "An Astrologer's Day" (এক জ্যোতিষীর দিন) গল্পটি একজন ভুয়ো জ্যোতিষীর একটি কর্মজীবনের দিনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। এক ব্যস্ত বাজারে, যেখানে নানা রকম পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়, সেখানে শহরের টাউন হল পার্কের কাছে একটি ছায়াদার তেঁতুল গাছের নিচে সে তার দোকান সাজিয়ে বসে। গল্পটি দুপুর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত বিস্তৃত। দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর, সে তার ব্যবসা শুরু করে—সঙ্গে থাকে ঝিনুকের খোল, তালপাতার লেখা ইত্যাদি। মুখে ভারী প্রসাধন করা থাকে, যাতে ক্রেতাদের আকর্ষণ করা যায়। কপালে সিঁদুর ও পবিত্র ভস্মের প্রলেপ থাকে। আঁকা কপাল আর ঘন গোঁফের মাঝে তার চোখদুটি তীক্ষ্ণ ও গভীর বলে মনে হয়। সে পরনে রাখে গেরুয়া রঙের পাগড়ি, আর তার সাজে ব্যবহার হওয়া গেরুয়া, লাল, ভস্ম ও কালো রঙের সংমিশ্রণ পথচারীদের আকৃষ্ট করে তার দিকে। তদুপরি, তার চোখের ঝিলিক দেখে লোকে ভাবে সে ভবিষ্যৎ বলার ক্ষমতা রাখে। ফলে মানুষ তার চারপাশে ভিড় করে, যেন মৌমাছি ঝাঁপ দেয় গাঁদা বা ডালিয়ার দিকে।

বাজারে আছে নানা ধরনের বিক্রেতা, যারা উচ্চস্বরে তাদের পণ্যের গুণগান করছে। কেউ ওষুধ বিক্রি করছে যেগুলো নাকি জাদুকরীভাবে রোগ সারিয়ে দেয়, কেউ নিলামে সস্তা কাপড় দিচ্ছে, আবার কেউ চুরি করা যন্ত্রপাতি বিক্রি করে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করছে। কেউবা জাদু দেখিয়ে এক অন্য জগৎ দেখানোর আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তোলে বাদাম বিক্রেতা, যে তার পণ্যের নামে বলে—‘বম্বে আইসক্রিম’, ‘দিল্লি বাদাম’, ‘রাজাদের স্বাদ’ ইত্যাদি।

বাজারে পৌরসভার আলো থাকে না, বিক্রেতারা নিজেরাই ব্যবস্থাপনা করে। কেউ খুঁটির উপর খোলা মশাল জ্বালায়, কেউ গ্যাসলাইট, কেউ বা সাইকেলের আলো ব্যবহার করে। জ্যোতিষী বাদাম বিক্রেতার পাশে বসে, তার ব্যবসা চালায় সেই জ্বলার আলোয় যা বাদামের স্তূপের ওপর ধোঁয়া তুলে ওঠে। পুরো এলাকা আলো-আঁধারিতে ভরা। এই আলো-ছায়ার জটিল মিশ্রণ জ্যোতিষীর জন্য আদর্শ, কারণ সে মিথ্যে বলেই ভবিষ্যৎ বলে। সে তার পূর্বপুরুষদের কৃষিকাজের পেশা ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। কখনো ভাবেওনি জ্যোতিষী হবে। তবু সে সবাইকে সন্তুষ্ট করে, কারণ সে এমন কথা বলে যা তারা শুনতে চায়। সে জানে, সাধারণ মানুষের সমস্যা—বিয়ে, টাকা, সম্পর্ক—এসব নিয়েই বেশি। তাই সে দশ মিনিট ধরে তাদের কথা শুনে, তারপর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অনুমান করে ভবিষ্যৎ বলে।

সন্ধ্যার সময় বাদাম বিক্রেতা তার আলো নিভিয়ে দেয়, যা জ্যোতিষীর কাছেও সঙ্কেত—তাকে এখন গুটিয়ে নিতে হবে। তখন সে একটি সম্ভাব্য গ্রাহককে লক্ষ্য করে। আরও কিছু টাকা রোজগারের আশায় সে বলে, লোকটিকে সে চিনতে পারছে—তার মনে যেন কিছু চিন্তা রয়েছে, কথা বললে উপকার হবে। প্রথমে সেই ব্যক্তি জ্যোতিষীর ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। অনেক দরাদরির পর ঠিক হয়, যদি সন্তোষজনক উত্তর পায় তবে আট আনা দেবে, নাহলে জ্যোতিষীকে দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে।

লোকটি চেরুট ধরাতে গিয়ে, আগুনের আলোয় জ্যোতিষী চিনে ফেলে—এই লোকই সেই, যাকে একসময় সে খুন করতে গিয়েছিল। সে তখন আর কিছু বলতে চায় না, তাকে পরদিন আসতে বলে। কিন্তু সেই ব্যক্তি তাকে জোর করে প্রশ্ন করায়—সে কি তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারবে?

তখন জ্যোতিষী বলে ওঠে, একসময় তাকে কেউ ছুরি মেরে কুয়োতে ফেলে রেখে গিয়েছিল মরতে। তবে তার খুনি চার মাস আগে মারা গেছে। এরপর সে সতর্ক করে, বাড়ির বাইরে গেলে নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে। তখন লোকটি, যার নাম গুরু নায়ক, জ্যোতিষীকে টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

জ্যোতিষী তার জিনিসপত্র গুটিয়ে বাড়ি ফেরে এবং স্ত্রীকে সেই টাকা দেয়। স্ত্রী আনন্দে জানায়, সে গুড় আর নারকেল কিনে মিষ্টি বানাবে। খাওয়ার পর, জ্যোতিষী স্ত্রীর কাছে নিজের অতীত জীবন আর গ্রামের ঘটনা খুলে বলে—কেন সে পালিয়ে এসেছিল। স্ত্রীর মুখে বিস্ময় ফুটে ওঠে, কিন্তু জ্যোতিষী তাকে আশ্বস্ত করে—সে কাউকে খুন করেনি, এখন আর তার অপরাধবোধে ভোগার দরকার নেই। এবার সে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে।

Bengali Interpretation : 

কাঁটায় কাঁটায় দুপুরবেলায় সে তার ঝোলা খুলল আর বিছিয়ে দিল তার পেশা সংক্রান্ত সরঞ্জাম, যার মধ্যে ছিল একডজন কড়ি, সময় ছক আঁকা একটা চৌকো কাপড়ের ফালি, একটা নোটবই, আর প্যালমাইআরা (হস্তরেখাবিচারবিদ্যা সংক্রান্ত) লেখালেখির একটা বান্ডিল। তার কপাল পবিত্র ছাই আর সিঁদুরে উজ্জ্বল, আর তার চোখগুলো একটা তীক্ষ্ণ, অস্বাভাবিক দীপ্তিতে চকচক করছিল, যা আসলে খদ্দেরের জন্য লাগাতার সনধানী দৃষ্টির পরিণাম, কিন্তু যেটাকে তার সরল মক্কেলরা ভবিষ্যদবাণীময় জ্যোতি বলে ভুল করত আর স্বচ্ছন্দ বোধ করত।

তার চোখের জ্যোতি রীতিমতো বেড়ে গিয়েছিল তাদের অবস্থানের কারণে রাঙানো কপাল আর গাল বেয়ে নেমে আসা কালো গোঁফদাড়ির মাঝখানে যেভাবে বসানো ওগুলো: এমনকি একজন নির্বোধের চোখও ওরকম পরিমণ্ডলে চকচক করবে। পরিণামকে আরও জোরালো করে তুলতে সে মাথায় একটা গেরুয়া রঙের পাগড়ি জড়িয়েছিল। এই বর্ণবিন্যাস কখনও ব্যর্থ হয়নি।

লোকজন তার দিকে আকৃষ্ট হত যেমন মৌমাছিরা হয় কসমস ফুল বা ডালিয়াবৃন্তের দিকে। সে বসত একটা ছড়ানো তেঁতুল গাছের ডালপালার নীচে যেটা টাউন হল পার্কের মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটা রাস্তার পাশে অবস্থিত। জায়গাটা ছিল নানাভাবে উল্লেখযোগ্য। একটা উত্তাল ভিড় সর্বদাই এই সরু রাস্তায় আনাগোনা করত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এর পুরোটা জুড়েই বিভিন্ন ধরনের ধান্দা আর জীবিকার প্রতিনিধিত্ব দেখা যেত। ওষুধপাতি বিক্রেতা, লোহা বা অন্যান্য ধাতুনির্মিত চোরাই জিনিসপত্র আর পুরনো ঝড়তিপড়তি বিক্রেতা, জাদুকর এবং সর্বোপরি, সস্তা কাপড়ের একজন নিলামদার, যে গোটা শহরের টনক নাড়িয়ে সারাদিন যথেষ্ট হইচই বাধাত। গলাবাজিতে তার ঠিক পরেই ছিল ভাজা চিনাবাদাম ফেরিওয়ালা, যে প্রতিদিন তার পণ্যসামগ্রীর একটা করে চটকদার নাম দিত, একদিন ডাকত 'বম্বে আইসক্রিম' বলে, তো পরের দিন 'দিল্লি আমন্ড', তৃতীয় দিন "রাজার সুখাদ্য", ইত্যাদি এবং আরও অনেক কিছুই, আর লোকজন দলে দলে তার কাছে যেত। এই ভিড়ের একটা বড়োসড়ো অংশ জ্যোতিষীর সামনেও ঘুরঘুর করত। জ্যোতিষী তার ধান্দা চালাত একটা উজ্জ্বল আগুনের শিখার আলোয় যেটা ফটফট শব্দ করত আর নিকটবর্তী চিনাবাদামের স্তূপের উপর ধোঁয়া ছড়াত।

জায়গাটার অর্ধেক কুহকের কারণ ছিল আসলে এই যে সেখানে পৌরসভার আলোর সুবিধা ছিল না। দোকানপাটের আলোয় আলোকিত ছিল জায়গাটা। দু-একটা দোকানে ছিল হিসহিস্ আওয়াজ করা গ্যাসলাইট, কয়েকটাতে খুঁটিতে আটকানো অনাবৃত শিখা, কয়েকটা পুরনো সাইকেল ল্যাম্পের আলোয় আলোকিত, আর দু-একটা জ্যোতিষীর দোকানের মতো, নিজের আলো ছাড়াই কাজ চালিয়ে নিত। আলোকরশ্মি আর চলমান ছায়ার এক বিভ্রান্তিকর কাটাকুটি ছিল ব্যাপারটা। এটা জ্যোতিষীর জন্য খুবই উপযুক্ত ছিল এই কারণে যে সে যখন তার জীবন শুরু করে জ্যোতিষী হতে সে একেবারেই চায়নি এবং ঠিক পরের মিনিটে তার নিজের কী হবে এ ব্যাপারে সে যতটুকু জানত তার থেকে একটুও বেশি জানত না অনাদের কী হতে চলেছে সে ব্যাপারে। সে গ্রহ নক্ষত্রদের কাছে ততটাই অপরিচিত ছিল যতটা ছিল তার সরল বিশ্বাসী মক্কেলরা। তবু সে এমন কিছু বলত যা সবাইকে খুশি আর অবাক করত সেটা ছিল মূলত পর্যবেক্ষণ, চর্চা ও সুচতুর আন্দাজের ব্যাপার। তা সত্ত্বেও, ওটা অন্য যে কোনো সৎ মানুষের পরিশ্রমের মতোই ছিল, এবং সে যে মজুরি দিনের শেষে ঘরে নিয়ে যেত, তা ছিল তার প্রাপ্য।
সে তার গ্রাম ছেড়েছিল কোনও পূর্ব চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা ছাড়াই। সেখানে যদি সে থেকে যেত তাহলে তার পূর্বপুরুষদের কাজকর্মকেই চালিয়ে যেত-যেমন, জমিচযা, জীবনধারণ করা, বিয়ে-থা করা, ও তার খেতে ও পৈতৃক ভিটেয় বুড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু তা হওয়ার ছিল না।
তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছিল কাউকে না বলে, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটাকে (ঘর) শ দুয়েক মাইল পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পেরেছিল সে বিশ্রাম নিতে পারেনি। একজন গ্রামের মানুষের কাছে এটা বিরাট ব্যাপার, যেন মাঝখানে একটা সাগর পেরিয়ে গেছে।
মনুষ্যজাতির বিপত্তির একটা কাজ চালানো গোছের বিশ্লেষণ ছিল তার কাছে বিয়ে, অর্থ আর মানববন্ধনের জট। দীর্ঘ চর্চা তার বোধশক্তিকে ধারালো করে তুলেছিল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সে বুঝে যেত গোলমালটা কী। প্রতি প্রশ্নের জন্য সে তিন পয়সা মজুরি নিম্ন কিছুতেই নিজের মুখ খুলত না যতক্ষণ না অন্যজন অন্তত দশ মিনিট কথা বলে ফেলেছে, যা তাকে এক ডজন উত্তর ও উপদেশের জন্য যথেষ্ট রসদ জোগাত। যখন সে তার সামনের মানুষটাকে বলত, তার হাতের তেলোর দিকে ঠায় চেয়ে থাকতে থাকতে, 'নানাভাবে তুমি তোমার চেষ্টার প্রতিদান পাচ্ছ না" দশজনের মধ্যে নয় জন তার সঙ্গে একমত হতে চাইত।  কিংবা সে জিজ্ঞাসা করত "তোমার পরিবারে কি কোনো মহিলা আছে, হয়তো এমনকি কোনো দূরাত্মীয়া, যে তোমার প্রতি সদয় নয় ?” বা সে চরিত্রের একটা বিশ্লেষণ প্রদান করত "তোমার বেশিরভাগ ঝামেলারই কারণ তোমার প্রকৃতি। শনির অবস্থান যা তাতে তুমি অন্যরকম হবেই বা কি করে? তোমার গভাব আবেগতাড়িত আর বাইরেটা বুক্ষ।" এটা তাকে তৎক্ষণাৎ তাদের অন্তরের প্রিয়পাত্র করে তুলত, কেননা আমাদের মধ্যে সবথেকে নম্র যে সেও ভাবতে ভালোবাসে তার একটা কঠোর বাইরের চেহারা আছে।

 বাদামবিক্রেতা তার আগুনের শিখা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিল আর বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। জ্যোতিষীর জন্যও এটা ছিল গুটিয়ে ফেলবার সংকেত, যেহেতু এর ফলে তার চারপাশে অন্ধকার ঘনাত শুধু কোনোখান থেকে একটা সবুজ আলোর ছটা দিক ভুল করে তার সামনে মাটিতে এসে পড়ত। সে তার কড়িগুলো আর জ্যোতিষচর্চার টুকিটাকি সাজসরঞ্জাম তুলে ফেলল আর সেগুলো যখন তার বোলার মধ্যে ভরছে, সবুজ আলোর ছটাটা তার নজর থেকে আড়াল হয়ে গেল, সে মুখ তুলে দেখল একটা লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে আঁচ করল যে, একজন সম্ভাব্য মক্কেল আর বলল, "তোমাকে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছে। এতে তোমার ভালো হবে যদি একটুক্ষণ বসে নাও আর আমার সঙ্গে কথাবার্তা বল।" অন্যজন গজগজ করে কিছু একটা উত্তর দিল। জ্যোতিষী তার নিমন্ত্রণটা জোর করে চাপাতে চাইল; বার ফলে অন্যজন তার হাতের তেলোটা জ্যোতিষীর নাকের নীচে মেলে ধরে বলল, "তুমি নিজেকে একজন জ্যোতিষী বল?" জ্যোতিষীর মনে হল, তাকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে এবং অন্যজনের হাতের তেলো সবুজ আলোর রশ্মিটার দিকে কাত করে বলল, "তোমার স্বভাব হল "আঃ, ওসব থামাও," অন্যজন বলল। "আমাকে কিছু কাজের কথা বলো..."

আমাদের বন্ধুবর অসম্মানিত বোধ করল। "আমি প্রতি প্রশ্নমাত্র তিন পয়সা দাম নিই, আর তুমি যা পাচ্ছ, তা তোমার টাকার হিসেবে যথেষ্ট ভালো হওয়া উচিত...।" একথা শুনে অন্যজন তার হাত গুটিয়ে নিল, এক আনা বের করল, আর সেটা তার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল "আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আমি যদি প্রমাণ করে দিই তুমি মিথ্যা বলছ, তোমাকে ওই আনাটা সুদসমেত ফেরত দিতেই হবে।" "তোমার যদি আমার উত্তরগুলো সন্তোষজনক মনে হয়, তুমি কি আমাকে পাঁচ টাকা দেবে?"

"না।"

"কিংবা তুমি আমাকে আট আনা দেবে?"

"ঠিক আছে, এই শর্তে যে তুমি আমাকে তার দ্বিগুণ দেবে যদি তোমার ভুল হয়," বলল আগন্তুক। আরও খানিক তর্কাতর্কির পর এই চুক্তি মেনে নেওয়া হল। জ্যোতিষী স্বর্গের উদ্দেশে একটা প্রার্থনা পাঠিয়ে দিল যখন কিনা অন্যজন একটা বিড়ি ধরাল। তার মুখের একটা ঝলক দেখতে পেল জ্যোতিষী দেশলাইয়ের আলোয়। কিছুক্ষণ সব চুপচাপ যখন রাস্তায় মোটরগাড়িরা হর্ন দিচ্ছিল, টাঙাচালকেরা তাদের ঘোড়াদের গালিগালাজ করছিল, আর ভিড়ের বাজে বকবকানি পার্কের আলোআঁধারিকে আলোড়িত করছিল। অন্যজন বসে পড়ল, বিড়ি টানতে টানতে, ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে, বসে রইল নিষ্ঠুরভাবে। জ্যোতিষী খুব অস্বস্তি বোধ করছিল। "এই যে, তোমার আনাটা ফেরত নাও। আমি এরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভ্যস্ত নই। আমার আজ দেরি হয়ে গেছে.."

সে গুটিয়ে ফেলার উপক্রম করে। অন্যজন তার কবজি ধরে আর বলে, "এখন আর তুমি এটা থেকে বেরোতে পারবে না। আমি যখন এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তুমিই আমাকে ধরে এনেছ।" তার দৃঢ়মুষ্ঠির মধ্যে জ্যোতিষী শিউরে ওঠে, আর তার কণ্ঠস্বর কেঁপে ওঠে আর ক্ষীণ হয়ে যায়। "আজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমি কাল তোমার সঙ্গে কথা বলব।" অন্যজন তার হাতের তেলো তার মুখের সামনে সবেগে তুলে ধরে, "চ্যালেঞ্জ মানে চ্যালেঞ্জ। শুরু করো।" জ্যোতিষী প্রবৃত্ত হয়, তার গলা শুকিয়ে আসে। "একজন মহিলা....."

"চুপ করো," অন্যজন বলে। "ওসব আমি চাই না। আমি আমার বর্তমান তল্লাশিতে সফল হব কি না? জবাব দাও, আর চলে যাও। নয়তো যতক্ষণ না তোমার সমস্ত পয়সা উগরে দিচ্ছ, আমি তোমাকে যেতে দেব না।" জ্যোতিষী কয়েকটা জাদুমন্ত্র বিড়বিড় করল আর জবান দিল, "ঠিক আছে। আমি বলব। কিন্তু আমি যা বলব তা যদি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, তুমি কি আমাকে এক টাকা দেবে? তা না হলে আমি মুখ খুলছি না, তুমি যা ইচ্ছে করতে পার।" ভালোরকমের বাকবিতণ্ডার পর অন্যজন রাজি হল। জ্যোতিষী বলল, "তোমাকে মৃত হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক বলছি?"

"ওঃ, আর বলো।"

" এক সময়ে একটা ছুরি তোমার মধ্যে দিয়ে ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল?" বলল জ্যোতিষী।

বেশ লোক।" সে তার ছাতি অনাবৃত করল ক্ষতচিহ্নটা দেখাতে। "আর কী?"

" আর তারপর মাঠের মধ্যে কাছাকাছি একটা কুয়োর ভিতর তোমাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তোমাকে মৃত বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।"
"আমার মরে যাওয়ারই কথা ছিল যদি না কিছু পথচলতি লোক ভাগ্যিস কুয়োর ভিতর উঁকি মারত" হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে অন্যজন, উৎসাহে উদ্দীপনায় বিহ্বল হয়ে। "কবে ওর নাগাল পাব?" সে জানতে চায়, মুঠি পাকিয়ে।

"পরলোকে," উত্তর দিল জ্যোতিষী। "সে চারমাস আগে অনেক দূরের এক শহরে মারা গেছে। তুমি আর ওর দেখা পাবে না কখনও।'" অন্য জন এটা শুনে গজরায়। জ্যোতিষী বলতে থাকে।

"গুরু নায়ক-"

"তুমি আমার নাম জান?" অন্যজন বলে, চমকে উঠে।

"যেমন আমি অন্য সবকিছুও জানি। গুরু নায়ক, আমার যা বলার আছে মন দিয়ে শোনো। এ শহর থেকে তোমার গ্রাম উত্তরদিকে দুদিনের যাত্রা। পরের ট্রেন ধরো আর কেটে পড়ো। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার জীবনে আবার বিরাট বিপদ যদি তুমি ঘর ছাড়।" সে পবিত্র ছাইয়ের এক চিমটে বের করে আর তার দিকে তুলে ধরে। "এটা তোমার কপালে ঘষে নাও আর ঘরে ফিরে যাও। কখনও আর দক্ষিণমুখো যাত্রা করো না, তাহলে তুমি একশো বছর বাঁচবে।"

"কেন আমি ঘর ছাড়ব আবার?" অন্যজন বলল "আমি কখনো-কখনো চলে যেতাম শুধু ওকে খুঁজতে আর দেখা পেলে গলা টিপে ওর জীবন বের করে দিতে।" সে খেদের সঙ্গেঙ্গ তার মাথা নাড়ে। "আমার হাত ফসকে পালিয়ে গেল। আশা করি অন্তত যেমনভাবে মরা উচিত ছিল সেভাবেই মরেছে।" "হ্যাঁ." বলল জ্যোতিষী। "একটা লরির নীচে ও থেঁতো হয়ে গিয়েছিল।" এটা শুনে অন্যজনকে সন্তুষ্ট দেখাচ্ছিল।

জ্যোতিষী যখন তার জিনিসপত্র তুলে ঝোলায় পুরেছে ততক্ষণে জায়গাটা জনহীন হয়ে গেছে। সবুজ আলোর রশ্মিটাও আর নেই, জায়গাটাকে অন্ধকার আর নীরবতায় ডুবিয়ে দিয়ে। আগন্তুক জ্যোতিষীকে হাত ভরে পয়সাকড়ি দেওয়ার পর রাতের মধ্যে মিলিয়ে গেছে।

জ্যোতিষী যখন ঘরে পৌঁছোল, প্রায় মাঝ রাত। দরজায় তার বৌ অপেক্ষা করছিল তার জন্য এবং কৈফিয়ৎ দাবি করল। সে পয়সাকড়িগুলো তার দিকে ছুঁড়ে দিল আর বলল, "গুনে দ্যাখো। একটাই লোক সব দিয়েছে।"

"সাড়ে বারো আনা," সে বলল, গুনতে গুনতে। দারুণ খুশি সে। "কাল আমি খানিকটা তালের গুড় আর কিছু নারকেল কিনতে পারব। বাচ্চাটা কতদিন ধরে মিষ্টির কথা বলছে। আমি ওর জন্য দারুণ কিছু বানাব।"

"শুয়োরটা আমাকে ঠকিয়েছে। ও আমাকে এক টাকা দেবে কথা দিয়েছিল," বলল জ্যোতিষী। বৌ তার দিকে মুখ তুলে তাকাল। "তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। কী গোলমাল?"

"কিছু না।"

রাতের খাবারের পর সদর দরজার পাশে নীচু বেঞ্চিতে বসে সে বলল, "তুমি জান, আজ একটা বিরাট বোঝা আমার উপর থেকে নেমে গেছে? এতগুলো বছর ধরে আমি ভেবেছিলাম আমার হাতে একটা লোকের রক্ত লেগে আছে। সেটাই কারণ আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম, তারপর এখানে থিতু হলাম আর তোমাকে বিয়ে করলাম। ও বেঁচে আছে।"

সে বিস্ময়ে খাবি খেল, "তুমি খুন করতে চেয়েছিলে।"

"হ্যাঁ, আমাদের গ্রামে, যখন আমি একজন বোকাসোকা তরুণ। আমরা মদ খেতাম, জুয়া খেলতাম, আর একদিন খুব ঝগড়া হল- এখন এসব ভেবে কী লাভ? এখন ঘুমোনোর সময়, সে বলল, হাই তুলতে তুলতে, আর বেঞ্চির উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.