যিনি অন্ধ ছিলেন, তবু গণিতে দেখেছিলেন বিশ্বজগতের সৌন্দর্য— লিওনার্ড অয়লার এর গল্প
সুইজারল্যান্ড, ১৮শ শতক।
এক কিশোর, নাম লিওনার্ড অয়লার। বাবা চাইতেন ছেলে যাজক হোক। কিন্তু অয়লারের মন পড়ে ছিল সংখ্যার ভেতর।
ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রেমে পড়ে যায় সে। তৎকালীন বিখ্যাত গণিতবিদ জোহান বারনুলি তার প্রতিভা দেখে অবাক হন এবং তাকে উৎসাহ দেন।
২১ বছর বয়সে অয়লার এমন এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার জন্য তাকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ অ্যাকাডেমিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এরপর তিনি বার্লিনে কাজ করেন। জ্যামিতি, অ্যালজেব্রা, ক্যালকুলাস, সংখ্যাতত্ত্ব—গণিতের প্রায় প্রতিটি শাখায় অসংখ্য গবেষণা প্রকাশ করেন।
অপ্রত্যাশিত মোড়: অন্ধত্ব
কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা তখনো বাকি...
অয়লারের একটি চোখে সংক্রমণ হলো। আরেকটি চোখে অপারেশন ব্যর্থ হলো। ধীরে ধীরে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারালেন।
অন্ধ হওয়ার পর, আমরা সাধারণ মানুষ কী করতাম? হতাশ হয়ে থেমে যেতাম।
কিন্তু অয়লার থামলেন না। বরং অন্ধ হওয়ার পরই তিনি আগের চেয়ে বেশি গবেষণা প্রকাশ করেন!
শুধুমাত্র মস্তিষ্ক আর স্মৃতির ওপর ভরসা করে, তিনি এমন সব কাজ করেন যা আজও পৃথিবীকে বিস্মিত করে।
গণিতের কবিতা: অয়লারের অভেদ
এবং তখনই তিনি তৈরি করেন এক আশ্চর্য সৌন্দর্যের সমীকরণ:
এটি অয়লারের অভেদ (Euler’s Identity) নামে পরিচিত।
এই একটি সমীকরণ গণিতের পাঁচটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাকে একত্র করে:
- e – প্রাকৃতিক লগারিদমের ভিত্তি
- π – বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত
- i – কাল্পনিক সংখ্যা
- 1 – গাণিতিক ঐক্য
- 0 – শূন্যতা
এই একটি সমীকরণে অ্যালজেব্রা, জ্যামিতি, ক্যালকুলাস ও সংখ্যাতত্ত্ব—সব মিলেমিশে গেছে।
এটা কেবল একটা সমীকরণ নয়—এটা গণিতের কবিতা।
অয়লারের গল্প আমাদের কী শেখায়?
অয়লারের গল্প কেবল প্রতিভার নয়। এটা জেদ, ভালোবাসা আর মনের শক্তির গল্প।
চোখে আলো না থাকলেও, তিনি দেখতে পেয়েছিলেন গণিতের গভীর সত্য। তিনি প্রমাণ করেছিলেন—সীমাবদ্ধতা নয়, আমাদের সম্ভাবনাই আসল পরিচয়।
যদি অন্ধ অবস্থায় থেকেও অয়লার এতদূর যেতে পারেন, তবে তুমি—আলো থাকা অবস্থায়—আর কত কিছু করতে পারো!
মনে রাখো...
- গণিত কঠিন লাগলে অয়লারকে মনে করো।
- প্রশ্ন করো “কেন?”—আরও গভীরে যাও।
- হাল ছেড়ো না, আরেকবার চেষ্টা করো।