ইতিহাস ও ভৌগোলিক পরিবেশ (PART-1)

 ইতিহাস ও ভৌগোলিক পরিবেশ :





প্রশ্ন- 1 : ভারত-ইতিহাসের উপর হিমালয়ের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তর : প্রত্যেক দেশের মানুষ তার মাতৃভূমির ভৌগোলিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। আবার দেশের ইতিহাস তো সেখানকার মানুষেরই কথা। তাই ভৌগোলিক পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসকে প্রভাবিত করে। ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বত এদেশের ইতিহাসকে যে প্রভাবিত করেছে এবং করছে ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণ আছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, হিমালয় পর্বত এদেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে অনেকটা সুরক্ষিত করে রেখেছে। বহির্জগত থেকে ভারতকে বিচ্ছিন্নও করে রেখেছে। আবার মনে রাখতে হবে যে, হিমালয় পর্বতের বাধা বহির্জগতের সঙ্গে এদেশের পারস্পরিক আদান-প্রদানকে অসম্ভব করে তোলেনি, বহিরাগত আক্রমণ থেকেও দেশকে সম্পূর্ণ নিরাপদও রাখতে পারেনি। আর্য, শক, হুন, পাঠান, মুঘল সবাইকে হিমালয় পর্বতের বাধা অতিক্রম করেই এদেশে প্রবেশ করতে হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ভারতের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর হিম প্রভাব অপরিসীম কবি সাহিত্যিকদের রচনায় দেবতাত্মা হিমালয় আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনাদর্শের উজ্জ্বল দিশারী হয়ে আছে।

প্রশ্ন-2 : ভারত-ইতিহাসের ওপর বিন্ধ্য পর্বতের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তর : বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতিতে যাতায়াত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে প্রাকৃতিক কোনো বাধাই মানুষের পক্ষে অতিক্রম করা কষ্টকর ব্যাপার নয়। তথাপি দেশ ও দেশবাসীর ওপর ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না । ভারতের প্রায় মধ্য ভাগে অবস্থিত বিন্ধ্য পর্বত যেন   ভারতীয় উপ-মহাদেশকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুটি সুনির্দিষ্ট ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। প্রাচীন বা মধ্যযুগে যখন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি তেমন ঘটেনি, তখন সাম্রাজ্যের নির্মাতারা সকলেই দক্ষিণ ভারতে উপস্থিত হতে পারেননি। ব্যতিক্রম ছিলেন মৌর্য বা গুপ্ত রাজারা, আলাউদ্দিন খলজি বা আকবর, আওরংজেব। আবার বিন্ধ্য পর্বতের বাধার ফলেই দক্ষিণ-ভারত উত্তরাঞ্চলের মতো এতটা বৈদেশিক আক্রমণের সম্মুখীন হয়নি। বিন্ধ্য পর্বতের বাধার ফলেই আবার আর্য সভ্যতা-সংস্কৃতি অপেক্ষাকৃত দেরীতে দক্ষিণ ভারতে বিস্তার লাভ করেছিল । দক্ষিণের দ্রাবিড় সভ্যতা -সংস্কৃতি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে টিকে থাকতে পেরেছিল অনেকদিন। তা সত্ত্বেও উত্তর-দক্ষিণের মিলন-মিশ্রণে কিন্তু কোনও অসুবিধা হয়নি। যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।


প্রশ্ন -3 : ভারত-ইতিহাসের উপর নদ-নদীর প্রভাব আলোচনা কর। 

উত্তর : প্রাকৃতিক পরিবেশ কোনও দেশের ইতিহাসকে যে এতখানি প্রভাবিত করতে পারে ভারতবর্ষ তার  উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।  ভারতবর্ষে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও মূলত এদেশ নদীমাতৃক। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকা নদ-নদী এক অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে জলপথে অপরাপর অঞ্চলের মানুষের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যোগসূত্র হিসাবে কাজ করছে।


পৃথিবীর ইতিহাসে যেমন, ভারতবর্ষেও তেমনিভাবে সভ্যতার উদয় হয়েছিল সিন্ধু নদের পারে। আর্যরাও এসে বসতি স্থাপন করেছিল 'সপ্তসিন্ধু'তে, অর্থাৎ সাতটি নদীর দেশে। কেবল প্রাচীন ও মধ্যযুগেই নয়, আধুনিক যুগেও নদীতীরেই গড়ে উঠেছে রাজধানী বা বাণিজ্য নগরী। গঙ্গা  এবং শোন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্র ছিল যেন নদী-পরিবেষ্ঠিত দুর্গ আক্রমণকারীরা সেখানে সহজে পৌঁছাতে পারেনি। আবার আধুনিক যুগে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়েছিল হুগলী (বা ভাগীরথী ) নদীর তীরে । 

সবশেষে বলা যেতে পারে যে, সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত নদীগুলোর পারে বন্দর এবং পোতাশ্রয় গড়ে উঠতে  পেরেছিল সহজেই। এইভাবে ভারত, ভারতবাসী তথা ভারত-ইতিহাসকে অনেকখানি প্রভাবিত করেছে ভারতে ছড়িয়ে থাকা নদ-নদী। ভারতের কৃষি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির উপর অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে আছে এ দেশের নদনদী। রবীন্দ্রনাথের কথায়— “ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর নদীজপমালাধৃতপ্রান্তর হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে ।”


ভারত-ইতিহাসে নদ-নদীর প্রভাব

১. নদীমাতৃক দেশ ভারত: নদনদীর প্রাচুর্য
২. বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন
৩ নদীতীরে সভ্যতার উদয় যেমন সিন্ধু
৪. নদীতীরে নগরীর সৃষ্টি
৫. বন্দর, পোতাশ্রয় প্রভৃতির সুবিধা 


প্রশ্ন-4: প্রাচীন ভারতের ঐতিহাসিক উপাদান হিসাবে মুদ্রার গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখ। 

উত্তর : সাম্প্রতিককালে ঐতিহাসিকরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে মুদ্রার গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ মুদ্রাতে বিশেষজ্ঞরা এমন সব তথ্য খুঁজে পান যা অপর আর কোনও কিছুতেই পাওয়া যায় না। মুদ্রায় ব্যবহৃত ধাতু থেকে কেবল সে দেশের ধাতু-শিল্পের-ই যে পরিচয় পাওয়া যায় এমন নয়, অর্থনীতির ও পরিচয় পাওয়া সম্ভব। আবার মুদ্রার প্রাপ্তিস্থান রাজ্যের পরিধি নির্ণয়ে ও সাহায্য করে থাকে। যেমন : কোনও রাজার প্রচারিত মুদ্রা যেসব এলাকায় পাওয়া যাবে সেইসব জায়গা যে তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল তা ধরে নেওয়া যেতে পারে। অন্তত সেইসব এলাকার সঙ্গে যে আর্থিক যোগাযোগ ছিল তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। মুদ্রায় খোদাই করা বা ছাপ দেওয়া রাজার ছবি দেখে বা রাজার নামাঙ্কন থেকে সেই রাজা কে ছিলেন তা সনাক্ত করা যায়। এমনকি, কুষাণরাজদের মুদ্রায় তারিখ দেওয়া থাকত বলে জানা সম্ভব হয়েছে যে তিনি কোন্ সময়কার মানুষ । এমনি আরও অনেক তথ্য মুদ্রা বিশারদরা মুদ্রা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবিষ্কার করে থাকেন, যার ফলে ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব অত্যধিক । 

প্রশ্ন-5 : প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান গুলি আলোচনা করো । 

উত্তর: ক. সূচনা :  ইতিহাসের উপাদান' বলতে বোঝায় সেইসব সূত্র যার  ভিত্তিতে  ঐতিহাসিকরা প্রাচীন ইতিহাস পুনর্গঠন করে থাকেন। দেশ এবং কাল (সময়) ভেদাভেদে  ইতিহাসের উপাদানের ও রকমফের হয়ে থাকে। যেমন প্রস্তরযুগে মানুষ লিখতে বা পড়তে জানত না বলে সেই সময়কার ইতিহাস রচনা করতে হয় তখনকার মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের নিদর্শন থেকে ।  আবার যখন মানুষ লিখতে পড়তে জানলো তখন লিখিত উপাদান থেকে ইতিহাস পুনর্গঠন করা সম্ভব হল। প্রাচীন ভারতে অবশ্য দ্বাদশ শতকের আগে কোন ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়নি। যে কারণে নানা উপাদানের উপর নির্ভর করেই প্রাচীন ভারত্যের ইতিহাস রচনা করতে হয়েছে। এই উপাদানসমূহের মধ্যে যেমন আছে প্রাচীন মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, তেমনি আছে তাদের তৈরী দালান, প্রাসাদ, মন্দির প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ এছাড়া প্রাচীন ভারতে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছিল – তা ধর্মগ্রন্থ-ই হোক, আর ধর্ম-নিরপেক্ষ গ্রন্থ – তার সবই ইতিহাস রচনার কাজে সাহায্য করে থাকে । 

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদানসমূহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে, যেমন : প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, ধর্ম-নিরপেক্ষ গ্রন্থ, প্রাচীন মুদ্রা, শিলালিপি, বিদেশী পর্যটকদের বিবরণী প্রভৃতি। 

 খ. প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ :  প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বা সাহিত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, বৌদ্ধ এবং জৈনগ্রস্থ মূলত ধর্মগ্রন্থ হলেও এইসব গ্রন্থে যে বিবরণ আছে তা থেকে প্রাচীন ভারতের সর্বাঙ্গীণ অবস্থা জানা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে বৈদিক আর্যদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে গেলে ঋগ্বেদের সাহায্য নিতেই হবে। কারণ সে সময়কার কথা জানবার আর কোনও উপায় প্রায় নেই বললেই চলে। গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক উত্তর ভারতে সর্বক্ষেত্রে যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহে তার পরিচয় পাওয়া যায় । 

গ. ধর্ম নিরপেক্ষ সাহিত্য :  ধর্ম নিরপেক্ষ সাহিত্যে যেমন আছে চরিতগ্রস্থ, তেমনি আছে অর্থনীতি বা রাজনীতি সংক্রান্ত গ্রন্থ, অথবা আয়ুর্বেদ, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত গ্রন্থ প্রভৃতি ।  প্রাচীন যুগের ভারতে কৌটিলোর 'অর্থশাস্ত্র' থেকে সমসাময়িক রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা হয়। তাছাড়া হর্ষবর্ধনের জীবনী অবলম্বনে রচিত বাণভট্রের ‘হর্ষচরিত’, বিশাখদত্তের 'মুদ্রারাক্ষস', সন্ধ্যাকর নন্দীর 'রামচরিত' প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে সমসাময়িক ভারতের নানা কথা জানা সম্ভব ।  খ্রীস্টীয় দ্বাদশ শতকে কাশ্মীরের রাজাদের কাহিনী অবলম্বনে রচিত কলহণ'এর 'রাজতরঙ্গিণী' ভারতের সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত । 

ঘ. মুদ্রার গুরুত্ব :  প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিখিত উপাদানের স্বল্পতাহেতু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এর গুরুত্ব অনেকখানি ।  আবার প্রত্নতত্ত্বের মধ্যে যে শাখাটি  বিশেষ প্রাধান্য লাভ করেছে তা হল মুদ্রা ।বাস্তবিকপক্ষে প্রাচীন ভারতের অনেক অজানা তথ্য কেবল মুদ্রাকে ভিত্তি করেই জানা গিয়েছে । ভারতীয় রাজাদের প্রচারিত মুদ্রা যেমন এ দেশে আবিষ্কৃত হয়েছে তেমনি আবার পাওয়া গিয়েছে এমন সব মুদ্রা যা প্রচার করেছিলেন প্রাচীন ভারতে রাজত্ব কারী বিদেশি রাজা যেমন  কুষাণ বা শকরা ।  কুষাণ  রাজাদের মুদ্রায় তারিখ এবং রাজার নাম খোদাই করা থাকত বলে সন্তানদের কথা সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়েছে । আবার মুদ্রায় ব্যবহৃত ধাতু থেকে কোন আমলে কি ধরনের ধাতুবিদ্যা প্রচলিত ছিল সে কথা সহজেই অনুমান করে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। 

ঙ. শিলালিপি, তাম্রলিপি প্রভৃতি : প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় শিলালিপি,  তাম্রলিপি প্রভৃতির মূলাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কারণ শিলালিপি প্রভৃতি নানাভাবে ইতিহাস রচনাতে সাহায্য করে। শিলালিপিসমূহের প্রাপ্তিস্থান থেকে কোন বিশেষ সম্রাট বা রাজার রাজ্যসীমা নির্ণয় করা হয়ে থাকে । যেমন মৌর্যসম্রাট অশোক। আবার শিলালিপিতে উৎকীর্ণ ভাষা থেকে সে আমলে প্রচলিত ভাষা সম্পর্কে ধারণা করা যায় । তাম্রলিপি থেকে পাওয়া যায় ধাতুবিদ্যার পরিচয়। অর্থাৎ কোন্ কোন্ ধাতুর ব্যবহার সে সময়ের মানুষ জানত সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়।

চ. বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ কাহিনী:  বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ কাহিনী ভারত ইতিহাস রচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন দেশ থেকে অগণিত পর্যটক এদেশে এসেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য পৃথক পৃথক হলেও এদেশের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে যে বিবরণ তারা লিপিবদ্ধ করেছেন ইতিহাস রচনার অনেক তথ্য তাতে পাওয়া যায়। মেগাস্থিনিস, ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাঙ প্রমুখের ভারত বিবরণ থেকে এমন অনেক কথা জানা গিয়েছে যা অন্য কোনও সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি। অবশ্য একথাও মনে রাখতে হবে যে, ভারতীয় ভাষা সম্পর্কে তাদের সম্পূর্ণ জ্ঞান ছিল না বলে ভারতবাসীর জীবনযাত্রার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য তারা বুঝে উঠতে পারেননি অথবা বুঝতে ভুল করেছিলন। সেজন্য বৈদেশিক বিবরণ যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করে তবেই ইতিহাস রচনার কাজে তা গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত ।

ছ. স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নিদর্শন : সংস্কৃতি মানুষের জীবনের-ই অঙ্গ । প্রাচীন ভারতে মানুষের সাংস্কৃতিক অগ্রগতির কথা জানতে গেলে নির্ভর করতে হবে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নিদর্শনগুলির উপর । বস্তুতপক্ষে ভারতের সর্বত্র যেসব স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে প্রাচীন ভারতের সাংস্কৃতিক তথা ধর্মনৈতিক ইতিহাস রচনায় তা একান্ত অপরিহার্য । হরপ্পা সভ্যতার আমলে যেসব নারীমূর্তি ও সীলমোহর প্রভৃতি পাওয়া গিয়েছে তা যেমন হরপ্পা সংস্কৃতির ভাস্করদের নিপুণতা ঘোষণা করে তেমনিভাবে গান্ধার শিল্পীরা যে মনোরম বুদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন তা সেখানকার ভাস্কর্য নিদর্শন থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । উত্তর ভারতে ও দক্ষিণ ভারতের শিল্পীরা স্থাপত্যবিদ্যায় যে ভিন্ন রীতি অনুসরণ করতেন তাও অনুধাবন করা সম্ভব হয়েছে স্থাপত্য নিদর্শনের ভিত্তিতেই । 

এইভাবে বলা যেতে পারে যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় লিখিত উপাদানের যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ হয়েছে অন্যান্য উপাদানের সাহায্যে । নানাবিধ উপাদানের সাহায্যে আজকে প্রাচীন ভারতের এক সর্বাঙ্গীণ চিত্র আমাদের নিকট উপস্থিত । 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.