জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম | Buddhism and Jainism (PART-1)



 ১. প্রশ্ন: 'তীর্থংকর' কাদের বলা হয়, এবং কেন ?

উত্তর :  জৈনরা বিশ্বাস করে যে মহাবীরের আগে আরও ২৩ জন তীর্থংকর জৈনধর্মের প্রচার করে গিয়েছেন। 'তীর্থংকর' বলতে এমন মানুষ বোঝায় যিনি ইহলোকের দুঃখ-দুর্দশা পার হবার তীর্থ বা ঘাট নির্মাণ করেন। অর্থাৎ যাঁরা মানুষকে দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তিদানের ব্যবস্থা করেন ২৩ জন তীর্থংকরের মধ্যে প্রথম ছিলেন ঋষভ (বা আদিনাথ) এবং ২৩-তম পার্শ্ব বা পার্শ্বনাথ আর সর্বশেষ বা ২৪-তম ছিলেন মহাবীর । 

২. প্রশ্ন: 'চতুর্যাম' বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : পার্শ্বনাথ জৈন ধর্মাবলম্বীদের অবশ্য পালনীয় হিসাবে চারটি ‘ব্রত'র কথা বলেছিলেন। এই চারটি দ্রুত একরে চতুর্যাম' নামে অভিহিত । ব্রতগুলি হল: ক. অহিংসা পালন করা খ. সত্য কথা বলা গ. চুরি করা থেকে বিরত থাকা এবং ঘ. বিষয় সম্পত্তির ওপর অনাসক্তি। এই চারটি ব্রত পালনের কথা পার্শ্বনাথ বলেছিলেন। কিন্তু মহাবীর এর সঙ্গে আরও একটি ব্রতের কথা উল্লেখ করেছেন । এবং তা ব্রহ্মচর্য ।

৩. প্রশ্ন: 'ত্রিরত্ন' বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : জৈনধর্মে মোক্ষলাভ-ই প্রধান । মোক্ষলাভ করতে গেলে জৈনদের তিনটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে । যেমন : সত্যজ্ঞান, সত্যবিশ্বাস এবং সত্য আচরণ । এই তিনটি নীতিকে ‘ত্রিরত্ন’ বলা হয় । রত্নকে যেমন সযত্নে রাখতে হয়, তেমনি জৈনরা তিনটি রত্ন, অর্থাৎ ‘ত্রিরত্ন’কে লালন-পালন করবে । কারণ এই তিনটির যে কোনও একটির অভাব থাকলে মোক্ষলাভ সম্ভব হয় না ।

৪. প্রশ্ন : জৈনরা কিভাবে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল ? 

উত্তর : অন্যান্য ধর্মে যেমন ক্রমে মতভেদ এবং তা থেকে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, তেমনি জৈনধর্মের ক্ষেত্রে ঘটেছিল । মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের আমলে মগধে এক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । দুর্ভিক্ষের সময় ভদ্রবাহু নামে জনৈক জৈন সাধু তার সহযোগীদের নিয়ে কর্ণাটকে যাত্রা করেন। এদিকে স্থূলভদ্র-এর নেতৃত্বে প্রবীণ জৈনরা মগধে রয়ে গিয়েছিলেন। মগধে বসবাসকারী জৈনসাধুরা এক সময় বস্ত্রধারণ করতে শুরু করেন, যদিও জৈনধর্মে তা স্বীকৃত নয় । পরে দুর্যোগ কেটে গেলে ভদ্রবাহু এবং অন্যান্যরা মগধে ফিরে আসেন এবং স্থূলভদ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। খ্রীস্টীয় প্রথম শতকে  জৈনদের মতবিরোধ সুস্পষ্ট রূপ গ্রহণ করে, এবং তারা ‘দিগম্বর’ এবং ‘শ্বেতাম্বর' নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

৫. প্রশ্ন : জৈনদের শাস্ত্রগ্রন্থ সম্বন্ধে কি জান ?

উত্তর : জৈনদের মতানুসারে মহাবীরের শিক্ষা এবং তার উপদেশসমূহ চতুর্দশপূর্ব নামক গ্রন্থে সংকলন করা হয়েছিল । অবশ্য এই গ্রন্থের আর কোনও অস্তিত্ব নেই । এখন তা লুপ্ত হয়েছে । খ্রীস্টীয় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতকে জৈন সাধু দেবধি’র নেতৃত্বে শ্বেতাম্বর জৈনরা এক মহাসভায় মিলিত হয়ে শাস্ত্রগ্রস্থ সংকলন করেন । এই গ্রন্থ ‘জৈন আগম’ বা ‘জৈন সিদ্ধান্ত’ নামে পরিচিত । একইভাবে দিগম্বর জৈনরা তাঁদের শাস্ত্র গ্রন্থ সংকলন করেন যার নাম ‘চতুর্বেদ’ ।

৬. প্রশ্ন : ‘আর্যসত্য’ বলতে গৌতম বুদ্ধ কি বুঝিয়েছিলেন ? 

উত্তর :  গৌতম বুদ্ধ মানুষের চরম মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছিলেন । চরম মুক্তিকে তিনি “নির্বাণ’ বলে অভিহিত করেন । এই নির্বাণ লাভ বলতে তিনি বুঝিয়েছিলেন দুঃখময় পৃথিবীতে বারবার জন্ম নেওয়া থেকে মুক্তি। যিনি নির্বাণ লাভ করতে চান তাঁকে প্রথমে, গৌতম বুদ্ধের মতে, চারটি ‘সত্য’ উপলব্ধি করতে হবে । যথা : ক. পৃথিবী দুঃখময়  খ. তৃষ্ণা বা আকাঙক্ষা থেকে-ই দুঃখ আসে গ. আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি (বিরতি) হলে তবেই মুক্তি সম্ভব এবং ঘ. অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন করলে পরে তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়।  এই চারটি সত্যকে-ই গৌতম বুদ্ধ ‘আর্যসত্য’ বলে অভিহিত করেছেন ।

৭। প্রশ্ন : 'অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ বলতে কি বোঝায় ?

উত্তর : গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের যে উপদেশ দিয়েছিলেন তার মূল কথা হল নির্বাণলাভ। অর্থাৎ বারবার জন্মলাভের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ । নির্বাণলাভের জন্য গৌতম বুদ্ধ যে আর্যসত্যের কথা বলেছেন তার প্রথম তিনটি উপলব্ধির কথা; আর চতুর্থটি হল বাস্তব জীবনে অনুশীলন করবার কথা। অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুশীলন করা বলতে তিনি বুঝিয়েছেন আটটি আদর্শ মেনে জীবন যাপন করা । এই আটটি মার্গ বা উপায় হল : সৎ-বাক্য, সৎ-সংকল্প, সৎ-চিন্তা, সৎ-ব্যবহার, সৎ-জীবন, সৎ-প্রচেষ্টা, সৎ-দর্শন এবং সৎ-মনোবৃত্তি।

৮। প্রশ্ন : বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সম্বন্ধে যা জান সংক্ষেপে লেখ ।

উত্তর : গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর উপদেশাবলী সংকলিত করা হয়নি । তাঁর মৃত্যুর অনেকদিন পরে বৌদ্ধ পণ্ডিতরা রাজগৃহ, বর্তমান বিহারের অন্তর্গত রাজগীরের সপ্তপর্ণী গুহাতে এক সভায় মিলিত হন । এই সভা বা সংগীতিতে প্রথম গৌতম বুদ্ধের উপদেশাবলী, তাঁর উপদেশের দার্শনিক ব্যাখ্যা প্রভৃতি সংকলিত হয় । পালি ভাষায় লিখিত এই গ্রন্থের নাম 'ত্রিপিটক’ ৷ ‘ত্রিপিটক’ তিনটি গ্রন্থ বা পিটকের সমষ্টি যথা : বিনয়-পিটক, সুত্ত-পিটক এবং অভিধম্ম-পিটক । ত্রিপিটক ব্যতীত অপরাপর বহু বৌদ্ধ গ্রন্থ ঐ ধর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করে থাকে । যেমন ; জৈন পরিশিষ্টপার্বন, রাজবলীকথে, মহাবংশ, দীপবংশ প্রভৃতি ।

৯। প্রশ্ন : 'পঞ্চশীল’ বলতে বৌদ্ধধর্মে কি বোঝান হয়েছে ?

উত্তর : গৌতম বুদ্ধ দার্শনিক তত্ত্ব অপেক্ষা অভ্যাস এবং ব্যবহারকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছিলেন । ধর্ম কেবল বিচারের বা তর্ক করবার বস্তু নয় । ধর্মকে অভ্যাস করতে হবে। এই অভ্যাসের জন্য তিনি তার শিষ্য বা অনুগামীদের পাঁচটি ব্রত গ্রহণ করবার কথা বলেছেন । যথা : ক. জীবহিংসা না করা খ. যা দান করা হয় নাই তা গ্রহণ না করা গ. ব্যাভিচার না-করা ঘ. অসত্য না বলা এবং ঙ. মাদকদ্রব্য গ্রহণ না-করা । এই পাঁচটি আচরণ বা অভ্যাস ‘পঞ্চশীল’ নামে অভিহিত ।

১০।  ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম কেন শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি তা সংক্ষেপে বুঝিয়ে বল ।

উত্তর : উত্তর ভারতে যে সময়ে জৈন এবং বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব হয় তখন বৈদিক ব্রাহ্মাণ্যধর্ম প্রবল প্রতাপে বিরাজ করছিল। কিন্তু জৈন ও বৌদ্ধধর্মের অহিংসার আদর্শ, যাগযজ্ঞের ওপর অনাস্থা এবং পুরোহিতদের অপ্রয়োজনীয়তা উভয় ধর্মকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। বিশেষ করে বৌদ্ধধর্ম যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এত প্রসার ও প্রতিপত্তি সত্ত্বেও এক সময় বৌদ্ধধর্ম সমূলে ভারতবর্ষ থেকে নির্বাসিত হয়েছিল।

ক. বৌদ্ধধর্মের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই ধর্মের প্রতি রাজপৃষ্ঠপোষকতার অভাব । এক সময়ে বৌদ্ধধর্ম রাজানুকূল্য লাভ করায় যেমন বৌদ্ধধর্মের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল, তেমনি অন্য সময়ে তার অভাবে অবনতি ঘটেছিল । 

খ. হিন্দুধর্ম গৌতম বুদ্ধকে অবতার হিসাবে মেনে নেবার দরুন হিন্দু এবং বৌদ্ধধর্মের মধ্যে সংঘাতের কোনও সুযোগ ছিল না। বরঞ্চ বৌদ্ধধর্মের আদর্শ হিন্দুধর্মকে পরিপুষ্ট করেছিল । 

গ. গৌতম মৃত্যুর পরে বৌদ্ধধর্মে যে পরিবর্তন এসেছিল তাতে বৌদ্ধধর্মের পক্ষে আর আলাদাভাবে টিকে থাকা সম্ভবপর ছিল না । মহাযানী বৌদ্ধরা বুদ্ধ মূর্তির পূজা শুরু করলে পরে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের ব্যবধান কমে এসেছিল । 

১১। প্রশ্ন: খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলনের কারণসমূহ আলোচনা  কর। 

উত্তর : সূচনা :  খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যেসব প্রতিবাদী ধর্ম-আন্দোলন জন্ম নিয়েছিল তাদের মধ্যে জৈনধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম প্রধান প্রতিবাদী আন্দোলন বলতে বোঝায় সমসাময়িক উত্তর ভারতে প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ব্যবস্থার প্রতিবাদ হিসাবে যে আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে । বৈদিক যুগের শেষ দিকে ব্রাহ্মণ্য ধর্মে নানা প্রকার জটিলতা ঢুকে পড়েছিল । অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যধর্ম আচার-অনুষ্ঠানসর্বস্ব হয়ে পড়ে । ধর্মে যাগ-যজ্ঞ, বলিদান প্রভৃতি গুরুত্ব পায়। এই ধরনের জটিলতা সাধারণ মানুষের পক্ষে ধর্ম পালনে অসুবিধার সৃষ্টি করে । এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছিল নতুন ধর্মান্দোলন। এই সূত্রে জন্ম নিয়েছিল ৬৩টি নতুন ধর্মমত যার মধ্যে জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম প্রধান আধুনিক গবেষণায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিবাদ হিসাবে প্রতিবাদী ধর্মের সৃষ্টি হলেও এর পেছনে গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণ ছিল । সামাজিক পরিবর্তন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে অনেকখানি যুক্ত বলে তার আলোচনা প্রথমে করা যেতে পারে ।

খ. অর্থনৈতিক : প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রধান অর্থনৈতিক কারণ হিসাবে বলা যায় খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের মধ্যে গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষিকাজের ব্যাপকতা । লোহার আবিষ্কারের পরে এই সময়েই তার ব্যাপক প্রচলন হয় । লোহার তৈরী কাস্তে, লাঙ্গল, নিড়ানি প্রভৃতির সাহায্যে শক্ত জমিকে চাষ-উপযোগী করে তোলা সম্ভব হয়েছিল। তাছাড়া চারা ধান গাছকে এক জায়গা থেকে অপর জায়গায় স্থানান্তরিত করে রোপণ পদ্ধতি আয়ত্ত করবার ফলে শস্যফলন বেড়ে গিয়েছিল । আবার কৃষিকাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় বলিবর্দের (বলদ) প্রয়োজন হয়েছিল আগেকার চেয়ে অনেক বেশি । ব্রাহ্মণ্যধর্মে প্রচলিত যাগযজ্ঞে পশুবলি  দেওয়া হত বলে সমাজে তখন গো-সম্পদ রক্ষা করবার তাগিদ দেখা দেয় । কৃষিকাজে উন্নতির ফলে আবার সমাজে নতুন এক বিত্তশালী সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয় । নগরে বসবাসকারীদের অনেকেও আবার ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করে বিত্তবান হয়ে ওঠে । এইভাবে বিত্তশালী এবং সাধারণ গরীবদের মধ্যে পার্থক্য দেখা দিয়েছিল। দরিদ্র মানুষ তাদের দুর্দশার জন্য ব্রাহ্মণ্যধর্মকে দায়ী করে যেন নতুন ধর্মের জন্য আকুল হয়ে উঠেছিল।

গ. সামাজিক : সামাজিক দিক দিয়ে বৈদিক যুগের শেষভাগে চার বর্ণের মানুষ এক রকম পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র, এই চার শ্রেণীর মধ্যে সামাজিক মর্যাদার অনেক তফাৎ ছিল । ব্রাহ্মণরা সবচেয়ে উঁচুতে, তারপরে ক্ষত্রিয়রা। বৈশ্যদের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। আর শূদ্ররা তো ছিল অচ্ছুৎ । এইভাবে যে সামাজিক প্রভেদ তাতে আর কেউ না হলেও ক্ষত্রিয়রা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল । অর্থাৎ ক্ষত্রিয়রা নিজেদের ব্রাহ্মণদের সমান সামাজিক মর্যাদা দাবি করতে থাকে । যার জন্য দেখা যায় তারা ধর্মের ব্যাপারে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য কেড়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে। খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী সব ধর্মীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্ষত্রিয়রা মহাবীর, গৌতম বুদ্ধ প্রভৃতি সকলেই ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশজাত ।

ঘ. ধর্মীয় : অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে সংকট দেখা দিয়েছিল তা ধর্মকে প্রভাবিত করেছিল অনিবার্যভাবেই । উত্তর ভারতে সেযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্মের আওতার বাইরে মুনিঋষিদের এক পরম্পরা বা ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল । তপস্বী মুনিঋষিরা হিমালয়ের বনে-জঙ্গলে বা নির্জনে একাকী কোনও জায়গায় বসবাস করতে পছন্দ করতেন । মাঝেমধ্যে তাঁরা লোকালয়ে যখন আসতেন তখন তাদের সরল, অনাড়ম্বর, জাতিভেদহীন জীবন পদ্ধতি সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করত । মুনিঋষিদের জীবের প্রতি দয়া এবং অহিংসার আদর্শ সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছিল । মানুষ তখন যাগযজ্ঞের অসারতা, হিংসার অপ্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল। সহজ, সরল, অহিংস ধর্ম পালনের জন্য আকুল হয়ে উঠেছিল ।

উপরি-উক্ত কারণের সমষ্টিগত ফল হিসাবেই খ্রীস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর-ভারতে প্রতিবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.