ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম ( NPS) : কিছু কথা

National Pension System


2022-23 আর্থিক বর্ষের জন্য অনেকেই এখন থেকেই সঙ্গত কারণেই কর-পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। AIS পরবর্তী সময়ে এটা এখন বহুলভাবে চর্চিত একটি বিষয় । এখানে বিভিন্ন ধরণের আলোচনায় একটি নাম প্রায়ই উঠে আসছে - সেটা হল NPS বা National Pension System

করছাড়ের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে অনেকেই এটাকে দেখছেন , কারণ এখানে বাড়তি কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা আছে আয়কর আইনেই। এটা ভারত সরকারের একটা ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প।
অনলাইন বা অফলাইনে এই অ্যাকাউন্ট অনেকেই খুলতে পারছেন , অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন এই বিষয়ে। তবে অধিকাংশই এর প্রাথমিক লাভ অর্থাৎ করছাড়ের বিষয়েই আগ্রহ প্রকাশ করছেন । কিন্তু প্রান্তিক লাভালাভের বিষয়ে অনেকেই সম্যকভাবে অবগত নন । কিভাবে এটা পরিচালিত হচ্ছে , পেনশন ফান্ড ম্যানেজার কারা আছে , অ্যানুয়িটি সার্ভিস প্রোভাইডারই বা কারা আছে , এর এক্সিট পলিসি বা উইথড্রয়ালের নিয়মই বা কি - এই বিষয়গুলি অনেকেরই অজানা ।
এই বিষয়গুলিও আলোচনায় আসা দরকার বিনিয়োগকৃত অর্থের স্বার্থেই ।
তাই এই বিষয়গুলিই আজকের আলোচনার বিষয় হিসাবে বেছে নিলাম । আশা করব NPS নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর এতে পাওয়া যাবে ।

● NPS-এর গঠনতন্ত্র :-

প্রথমেই বলি এই NPS এর স্ট্রাকচার নিয়ে। 2004 সালে NPS আসলেও , এর রেগুলেটর তৈরি হয় অনেক পরে - 2014 সালে । এর নাম দেওয়া হয় Pension Fund Regulatory And Development Authority ।
এই PFRDA হল একটি নিয়ামক সংস্থা ( অনেকটা SEBI র মতোন) । এর অধীনে রয়েছে NPS Trust , যারা এই NPS এ জমা পরা টাকা , অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের স্বার্থ , ক্যাপাটাল অ্যাসেট সব কিছুর তত্ত্বাবধান করে । এদের একটি 'বোর্ড অফ ট্রাস্টি' আছে , যেখানে বর্তমানে আটজন ট্রাস্টি আছেন । এর বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন শ্রী অতনু সেন , যিনি দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কিং সেক্টরে ( SBI) কাজ করেছেন । এটি গঠিত হয়েছিল 27/02/2008 এ । একে বলা যেতে পারে NPS এর কাস্টোডিয়ান ।
এরা আবার ফান্ড পরিচালনার সুবিধার্থে একটি Central Recordkeeping Agency ( CRA ) গঠন করে তার দায়িত্ব অর্পন করে NSDL কে । এই CRA তথা NSDL মূলত একটি সমন্বয়কারী সংস্থা হিসাবে PFRDA , পেনশন ফান্ড ম্যানেজার্স , অ্যানুইটি সার্ভিস প্রোভাইডার , ট্রাস্টি ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ রেখে NPS ফান্ড পরিচালনা করে । এছাড়া , উপভোক্তাকে PRAN ( Permanent Retirement Account Number ) কার্ড দেওয়া ও তাদের সমস্ত তথ্যকে নথিভূক্ত রাখার কাজও করতে হয় এই CRA কেই ।
এই কাজে তাদের সাহায্য করে একটি ট্রাস্টি ব্যাঙ্ক । বর্তমানে এটি হল Axis Bank । সমস্ত রকমের আর্থিক আদানপ্রদানের কাজ হয়ে থাকে এই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে । এরাই আপনার বিনিয়োগ করা ফান্ড অ্যালোকেশন করে বিভিন্ন PFM দের মধ্যে ।
সংক্ষেপে এই হল NPS এর গঠনতন্ত্র ।

● পেনশন ফান্ড ম্যানেজার্স (PFM) :-

এবার আসা যাক NPS এ ফান্ড ম্যানেজার্স আর এদের ফান্ড অ্যালোকেশনের পদ্ধতির বিষয়ে । এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যদি 100 টাকা আপনার NPS অ্যাকাউন্টে জমা করেন , তাহলে সেটা বিভিন্নভাবে একাধিক খাতে বন্টিত হয়ে যায় । এটাই হল মূলত ফান্ড অ্যালোকেশন । এর মূল রাশটা অবশ্য থাকবে আপনার হাতেই - অর্থাৎ আপনার ইচ্ছা অনুসারেই এই ফান্ড অ্যালোকেশন করবে ট্রাস্টি ব্যাঙ্ক ।
আবেদনের সময়েই আপনাকে নির্বাচন করতে হবে NPS এর তালিকাভূক্ত যে কোন একটি ফান্ড ম্যানেজার্সকে , যারা আপনার নির্দেশ মতো আপনার টাকা বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে উদ্দীষ্ট লাভ এনে দেবে বা তার চেষ্টা করবে ।
বর্তমানে আটটি Pension Fund Managers আছে , যারা PFRDA অনুমোদিত । এরা হল -
1 . Aditya Birla Sunlife Pension Management Ltd.
2. HDFC Pension Management Co. Ltd.
3. ICICI Prudential Pension Funds Management Co. Ltd.
4. Kotak Mahindra Pension Fund Ltd.
5. LIC Pension Fund Ltd.
6. Reliance Capital Pension Fund Ltd.
7. SBI Pension Funds Private Ltd.
8. UTI Retirement Solutions Ltd.
আপনি উপরোক্ত যে কোন একটি ফান্ড ম্যানেজারকে আপনার অর্থ পরিচালনার জন্য নির্বাচন করতে পারেন । পছন্দ না হলে আপনি বছরে দু'বার পর্যন্ত এই ফান্ড ম্যানেজার্স বদলাতেও পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের অতীত কর্ম সম্পাদনার উপর নির্ভর করেই আপনাকে আপনার ফান্ড ম্যানেজার্স নির্বাচন করতে হবে । এর জন্য আপনাকেই রিসার্চ করে নিতে হবে । এখানে কে ভাল , কে মন্দ তা বলার জায়গা নয় , তাই সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না । এটা আপনাকেই ঠিক করতে হবে ।
তবে এখানে বলে রাখা ভাল যে , যে সমস্ত সরকারি কর্মচারির ( কেন্দ্র ও রাজ্য ) পেনশন এই NPS এর মাধ্যমে বর্তমানে হচ্ছে , তাদের ক্ষেত্রে এই PFM হল উপরোক্ত তালিকায় থাকা SBI , UTI এবং LIC ।

● NPS অ্যাসেট ক্লাস :-

এই NPS এর অর্থাঙ্ক মূলত অ্যাসেট বাজারেই বিনিয়োগ করা হয় , তাই এর সাথে রিস্কও জড়িয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক । উপভোক্তার বয়স এবং রিস্কের মাত্রার উপর ভিত্তি করে মূলত চার রকমের অ্যাসেট ক্লাসে এই বিনিয়োগ হয়ে থাকে NPS এর অর্থ । এগুলো হল -
1. অ্যাসেট ক্লাস E - এখানে মূলত ইক্যুইটিতে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় ,
2. অ্যাসেট ক্লাস C- এখানে মূলত কর্পোরেট ডেট ফান্ডে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় ,
3. অ্যাসেট ক্লাস G- এখানে মূলত সরকারি বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় ,
4. অ্যাসেট ক্লাস A- অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ( হাই রিস্কযুক্ত) ,
"E-C-G-A" - এই হল NPS এর চারটি নির্দিষ্ট অ্যাসেট ক্লাস । একজন NPS বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগকৃত অর্থ এই চারটি অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে ভাগ করে দিতে পারবেন , যাতে তার অর্থ ভাল রিটার্ন দেয় ভবিষ্যতে।
এখানে বিনিয়োগকারী দুটি অপশন পাবেন বেছে নেবার জন্যে - Active Choice এবং Auto Choice । এই নির্বাচনের উপরেই নির্ভর করবে কোন অ্যাসেট ক্লাসে শতকরা কতো অর্থ বিনিয়োগ করবে তার নির্বাচিত ফান্ড ম্যানেজার্স ।
● ACTIVE Vs. AUTO CHOICE :-
▪︎▪︎ বিনিয়োগকারী যদি এই দুইয়ের মধ্যে 'অ্যাকটিভ চয়েস' নির্বাচন করেন , তাহলে এক্ষেত্রে তিনি তার অর্থের কতো শতাংশ ইক্যুইটিতে (E) , কতো শতাংশ কর্পোরেট বন্ডে (C) এবং কতো শতাংশ সরকারি বন্ডে (G) ভাগ করে দিতে চান , সেটা তিনি নিজেই ঠিক করে দিতে পারবেন । যদিও বিনিয়োগকারীর 50 বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ইক্যুইটিতে তার বিনিয়োগের সর্বোচ্চ 75% পর্যন্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন । এরপর থেকে প্রতি বছর পিছু এর পরিমাণ 2.5% করে কমতে থাকবে । 60 বছর বয়সে গিয়ে এটা কমে গিয়ে 50% এ নির্দিষ্ট হয়ে যাবে।
অ্যাসেট ক্লাস A তে সর্বোচ্চ 5% পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে , কারণ এতে রিস্কের পরিমাণ সব থেকে বেশি।
এইভাবে E-C-G-A তে মোট 100% ফান্ড অ্যালোকেশন করতে পারবেন আপনি । সেই মতো আপনার PFM সেই খাতেই নির্দিষ্ট হারে অর্থ বিনিয়োগ করবেন ।
▪︎▪︎ অন্যদিকে যে সমস্ত বিনিয়োগকারীর এ সমস্ত বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান নেই বলে মনে করছেন , তাদের জন্য আছে Auto Choice এর সুবিধা । এখানে বিনিয়োগকারী তার বয়স এবং পোর্টফোলিও অনুসারে তিনটি লাইফ সাইকেল (LC) ফান্ড থেকে পছন্দ মতো যে কোন একটি বেছে নিতে পারবেন।
এখানে তাকে ফান্ড অ্যালোকেশনের জটিলতার মধ্যে ঢুকতে হবে না । NPS-কৃত পূর্ব-নির্দিষ্ট অ্যালগোরিদম্ অনুসারে তার বিনিয়োগকৃত অর্থ E-C-G ( Equity-Corporate-Government ) অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে বন্টন করে দেবে তার পেনশন ফান্ড ম্যানেজার । এই তিনটি লাইফ সাইকেল হল -
1. LC 75 ( এখানে E অ্যাসেটে সর্বোচ্চ 75% , C তে 10% এবং G তে 15% অ্যালোকেট করা হয় , যেটা বয়সের সাথে পরিবর্তিত হবে নির্দিষ্ট তালিকা ধরে )
2. LC 50 ( E: 50% ; C: 30% ; G: 20%)
3.LC 25 ( E: 25% ; C: 45% ; G: 30%)
● ট্যাক্স বেনিফিট :-
এটা যদিও সবারই মোটামুটি জানা । তবুও আর একবার বলে দিই । আপনারা জানেন যে NPS এ দুই ধরণের অ্যাকাউন্ট হয় : Tier -1 এবং Tier -2 । এখানে আমরা আলোচনা করছি মূলত টিয়ার-1 নিয়ে ।
আয়কর আইনের 80 CCD(1B) ধারায় এই টিয়ার-1 অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করা বার্ষিক সর্বোচ্চ 50,000 টাকার উপর রিবেট পাওয়া যায় । এর ফলে উচ্চ ট্যাক্স ব্র্যাকেটে যারা আছেন বা যারা 80 C ধারায় ছাড়ের কোটা ( 1.5 লাখ টাকা) শেষ করে ফেলেছেন , তাদের ক্ষেত্রে এটা একটা লোভনীয় বিনিয়োগ যেখানে এক লপ্তে 10,000 টাকা থেকে 15,000 টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় মিলতে পারে ।
এছাড়া , NPS এর মেয়াদ পূর্তির পর মোট যে সঞ্চিত কর্পাসের 60% টাকা ফেরত দেওয়া হয় অ্যানুইটি প্ল্যান কেনার জন্যে , তা সম্পূর্ণ করমুক্ত । বাকী 40% টাকা যা একসাথে বিনিয়োগকারী ফেরৎ পেয়ে যান , সেটাও পুরোপুরি করমুক্ত আয় ।
এখানে অবশ্য উপভোক্তার 60 বছর পূর্তিতে NPS এ ওনার সঞ্চিত কর্পাসের কমপক্ষে 40% দিয়ে অ্যানুইটি বাধ্যতামূলকভাবে কিনতেই হবে , বাকিটা ওনাকে লাম্পসাম ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে । তবে ইচ্ছা করলে তিনি এই অ্যানুইটির পরিমাণ সর্বোচ্চ 60% পর্যন্তও করতে পারেন । কিন্তু প্রি-ম্যাচিওর নিষ্ক্রমণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে 80% ফান্ড ব্যবহৃত হবে অ্যানুইটিতে , বাকি 20% তিনি লাম্পসাম তুলে নিতে পারবেন ।
তবে এখানে মনে রাখতে হবে যে NPS এর দুটি ক্ষেত্রেই ( অ্যানুইটি ও লাম্পসাম ) প্রাথমিকভাবে করমুক্তির ব্যবস্থা থাকলেও , পরবর্তীতে অ্যানুইটি থেকে প্রাপ্ত পেনশন বা লাম্পসাম টাকা থেকে প্রাপ্ত ইন্টারেস্ট/উৎপন্ন আয় কিন্তু স্ল্যাব রেট অনুসারেই করযোগ্য আয় হিসাবেই বিবেচিত হবে সংশ্লিষ্ট পেনশনারের ক্ষেত্রে ।
তবে টিয়ার-2 তে সঞ্চিত টাকার উপর কোন কর ছাড় মেলে না । এটি মূলত একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের মতো কাজ করে । তবে এটি ঐচ্ছিক , বিনিয়োগকারী চাইলে এই অ্যাকাউন্ট নাও খুলতে পারেন ।
● অ্যানুইটি সার্ভিস প্রোভাইডার (ASP) :-
বিনিয়োগকারীর 60 বছর বয়স হলে তার NPS ফান্ডে সঞ্চিত অর্থের কমপক্ষে 40% অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় অ্যানুয়িটিতে , যেখান থেকে তিনি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেনশন হিসাবে পেতে থাকবেন। এই সময়ান্তরটি মাসিক বা ত্রৈমাসিক বা ষান্মাসিক বা বার্ষিক হতে পারে ।
এই পেনশন যারা দিয়ে থাকে , তারাই হল অ্যানুইটি সার্ভিস প্রোভাইডার বা ASP ।
IRDAI এবং PFRDA এদের তালিকাভূক্ত করে NPS এর জন্য এবং বিনিয়োগকারী সেই তালিকার মধ্যে থেকেই যে কোন একটি ASP থেকে তার অ্যানুইটি কিনতে পারেন ।
বর্তমানে অনুমোদিত এই ASP গুলো হল -
1. LICI
2. HDFC Life Insurance Co. Ltd.
3. ICICI Prudential
4. SBI Life
5. Star Union Dai-Ichi
6. Kotak Mahindra
7.IndiaFirst Life Insurance
8. MaxLife
9. Canara HSBC Oriental Bank of Commerce Life Insurance Co. Ltd.
10. Bajaj Allianz
11. Tata AIA
12. Edelweiss Tokio Life Insurance
13. PNB Metlife India Insurance Co. Ltd.
● NPS Exit Policy :-
একজন বিনিয়োগকারী বা উপভোক্তা NPS ফান্ড/ অ্যাকাউন্ট থেকে তিনভাবে বেরিয়ে আসতে পারেন -
(a) উপভোক্তার 60 বছর বয়স হলে
(b) 60 বছরের আগেই Pre-Mature Exit হলে
(c) উপভোক্তার মৃত্যু হলে
তবে 60 বছর বয়সের পরেও উপভোক্তা চাইলে তার 75 বছর বয়স পর্যন্ত এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে যেতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি যে কোন সময়ে চাইলেই এই বিনিয়োগ বন্ধও করে দিতে পারবেন।
এছাড়া , উপভোক্তা চাইলে তার অ্যানুইটি তিন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে পারেন এবং লাম্পসাম টাকা ফেরৎ পাবার বিষয়টি 10 বছর পর্যন্ত পিছিয়েও দিতে পারবেন। এটাকে বলা হয় Deferment of NPS Account ।
60 বছর বয়সে যদি উপভোক্তার মোট কর্পাস 5 লাখ টাকা বা তার কম হয় , তাহলে তিনি চাইলে পুরো টাকাটাই তুলে নিতে পারবেন , কোন অ্যানুইটি তিনি কিনতে নাও পারেন।
তবে তিনি যদি 60 বছর বয়সের পর থেকেই পেনশন পেতে চান , তাহলে এর জন্য তার 60 বছর পূর্তির ছ'মাস আগে তাকে একটা Exit Claim ID পাঠাবে NSDL । সেই ID দিয়েই তাকে ইউথড্রয়াল রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে CRA বা NSDL কে । বাকি কাজ তার পরেই শুরু হবে ।
অন্যদিকে NPS ফান্ডে উপভোক্তার 60 বছর বয়সের পরেও চালু রাখা বা পিছিয়ে দেওয়ার কাজটি করতে হবে তার 60 বছর বয়স পূর্তির কমপক্ষে 15 দিন আগে থাকতে ।
● অ্যানুইটি স্কিমের পাঁচটি প্রকারভেদ :-
উপভোক্তারা নিম্নোক্ত পাঁচটি স্কিমের অ্যানুইটির মধ্যে তাদের প্রয়োজন অনুসারে যে কোন একটি বেছে নিতে পারবেন এবং সেই মতোন কম-বেশি বিভিন্ন হারে তারা বা তাদের পরিবার পেনশন পেতে থাকবেন ।

1. Annuity for life with ROP

এখানে উপভোক্তা আজীবন পেনশন পেতে থাকবেন , তার মৃত্যুর পর এই পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে । তার মৃত্যুর পর অ্যানুইটি ক্রয়ের পুরো টাকাটা ফেরত পেয়ে যাবেন তার নমিনি । একে বলে Return of Purchase বা ROP ।

2. Joint Life Annuity with ROP

উপভোক্তা পেনশন পাবেন , তার মৃত্যুর পর তার স্বামী/স্ত্রী এই পেনশন পাবেন আমৃত্যু। তার মৃত্যুর পর পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে এবং অ্যানুইটির পুরো ক্রয়মূল্যটা ফেরত পেয়ে যাবে তার নমিনি ।

3. NPS- Family Income with ROP

এখানে উপভোক্তা , তার স্বামী/স্ত্রী , তার মা , তার বাবা পরপর পেনশন পেতে থাকবেন তার আগের জনের মৃত্যুর পর থেকে। শেষ অ্যানুইট্যান্টের মৃত্যুর পর পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে এবং তাদের লিগাল হেয়ার বা সন্তান অ্যানুইটির পুরো ক্রয়মূল্যটা ফেরত পেয়ে যাবে ।

4. Annuity for Life without ROP

উপভোক্তা আজীবন পেনশন পাবেন । কিন্তু তার মৃত্যুর পর পেনশন যেমন বন্ধ হয়ে যাবে , তেমনি কোন অ্যানুইটি ক্রয়মূল্য ফেরত দেওয়াও হবে না । এখানে পেনশনের পরিমাণ আগের তিনটি ক্ষেত্র থেকে বেশিই হবে ।

5. Joint Life Annuity without ROP

এখানে উপভোক্তা পেনশন পাবেন , তার মৃত্যুর পর তার spouse সেই পেনশন পেতে থাকবেন । কিন্তু স্পাউসের (spouse) মৃত্যুর পর পেনশন যেমন বন্ধ হয়ে যাবে , তেমনি অ্যানুইটি ক্রয়মূল্যও ফেরত দেওয়া হবে না পরিবারকে।
এইভাবে একজন NPS উপভোক্তা তার এবং তার পরিবারের চাহিদা অনুসারে পেনশন অ্যানুইটি স্কিম নির্বাচন করতে পারবেন । যদিও প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেনশনের পরিমাণও কিন্তু আলাদা আলাদা হবে ।
● সংযোজন :-
সম্প্রতি ( আগস্ট, 2021) PFRDA এবং NPS ট্রাস্ট যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখন থেকে NPS অ্যাকাউন্ট খোলার ঊর্ধ্বতম বয়সসীমা 65 থেকে বাড়িয়ে 70 বছর করা হল । উপভোক্তা চাইলে এই অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে পারবে সর্বোচ্চ তাঁর 75 বছর বয়স পর্যন্ত , এর কোন পরিবর্তন অবশ্য হয় নি । এর ফলে এখন 18 থেকে 70 বছর বয়সীরা এই অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ পাচ্ছেন।

NPS TYPES

আগের পর্বেই বলেছি যে ভারত সরকার এই NPS নিয়ে আসে 01/01/2004 তারিখ থেকে । মূলত কেন্দ্রীয় কর্মচারিদের পেনশনের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতেই এই প্রকল্পের সূচনা । পরবর্তীতে ভারতের বহু রাজ্যেও তা অনুসৃত হতে থাকে । সব শেষে , 01/05/2009 তারিখ থেকে এই প্রকল্প সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় ।
তাই বর্তমানে এই বাজার-ভিত্তিক পেনশন ব্যবস্থার চারটি রূপ আমরা দেখতে পাই -
1. NPS ( Central Govt. Employee)
2. NPS ( State Govt. Employee)
3. NPS ( Corporate )
4. NPS ( All Citizen Model)
উপরোক্ত All Citizen Model এর মধ্যে প্রায় সব শ্রেণির উপভোক্তাই এসে যাচ্ছেন। আমাদের আলোচনার কেন্দ্রেও এই মডেলটিই রয়েছে । এখানে স্বনিযুক্ত ব্যক্তি , গৃহবধূ , প্রাথমিক/মাধ্যমিক/কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী , রাজ্য সরকারি কর্মী ( W.B.) , ব্যবসায়ী , দোকানদার , বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ সকলেই এই পেনশন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন ।
● কি করে এই অ্যাকাউন্ট খুলবেন :-
এই বিষয়টা আগ্রহী ব্যক্তিরা নিজেরাই খোঁজখবর করে নিতে পারবেন আশা করি । এখন তো অনেক উৎসই আছে এর জন্যে , তাই DYOR ( Do your own research) হচ্ছে সব থেকে সঠিক পথ এই সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ।
তবুও সামান্য দু-একটি কথা বলি এই বিষয়ে , না হলে লেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে ।
আপনি 'All Citizen Model' এর আওতায় NPS অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন দু'ভাবে ।
■ প্রথমত , আপনি অফলাইন পদ্ধতিতে NPS Trust ও PFRDA অনুমোদিত এবং রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত 75 টি POP ( এর পুরো অর্থ হল - Point Of Presence ) তে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন । বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এতে আছে POP হিসাবে ( যেমন - SBI , PNB , HDFC , ICICI , BOC , CAMS প্রভৃতি ) ।
এই POP গুলোকে আবার তাদের অধীনে একাধিক Service Provider খোলার অনুমতিও দিয়েছে NPS Trust । এদেরও রেজিস্ট্রেশন করাতে হয় নির্দিষ্ট POP র অধীনে । এদের তখন বলা হয় POP-SP ( POP - Service Provider ) ।
সারা দেশে এ'রকম POP-SP র সংখ্যা বর্তমানে প্রায় 85,000 । আপনি আপনার নিকটস্থ POP-SP তে গিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন । ফর্ম পূরণ করে জমা দেবার পর এরাই বাকি সব কাজ করে দেবে । PRAN কার্ডও বাড়ির ঠিকানায় চলে আসবে । এদের মাধ্যমেই আপনি টাকা জমা দিতে পারবেন । এই সমস্ত POP-SPগুলো এখন তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনেও এই কাজ করছে । তাই নেট ব্যাঙ্কিং থাকলে এর সুবিধাও নিতে পারবেন।
■ আবার আপনি যদি চান তাহলে অনলাইন পদ্ধতিতে eNPS.nsdl.co.in সাইটে গিয়ে বাড়িতে বসেই নেটব্যাঙ্কিঙের সাহায্যে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এখানে আপনার PAN , ক্যানসেলড্ চেকের পাতা , ছবি এবং আপনার স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে ।
এখানে PRAN ( Permanent Retirement Account Number) আর পাশওয়ার্ড দিয়ে লগিন করে আপনার সমস্ত তথ্য আপনি বাড়িতে বসেই দেখতে পাবেন এবং টাকা জমাও করতে পারবেন নিয়মিতভাবে ।
এখানে যদি আপনি আধার OTP দিয়ে আপনার অনলাইনে দাখিলকৃত ফর্ম অথেন্টিকেশন করান , তাহলে বাই পোস্ট আর কিছু আপনাকে পাঠাতে হবে না CRA কে, উল্টে আপনার ঠিকানায় PRAN কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট সাত দিনের মধ্যে চলে আসবে ।
তবে আধার OTP অথেন্টিকেশন না করালে ( আধার-মোবাইল নম্বর সিডিং থাকতে হবে ) , আপনাকে অনলাইনে সাবমিট করা ফর্মের প্রিন্টআউট বার করে , সেখানে আপনার ছবি চিটিয়ে , সই করে তা পাঠাতে হবে CRA ( Central Recordkeeping Agency ) এর দপ্তরে , মুম্বাইতে । ওদের ঠিকানাও সেখানে দেওয়া থাকবে ।
অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলার 30 দিনের মধ্যেই এই হার্ড কপি পাঠাতে হয় , এর পর বাই পোস্ট আপনার PRAN কার্ড চলে আসবে আপনার ঠিকানায় ।
অনলাইনে eNPS অ্যাকাউন্ট খোলার আরো কিছু সুবিধাও আছে । পরে সেটা আলোচনা করছি।
■ এখানে মনে রাখতে হবে যে NPS এ একজন ব্যাক্তি একটাই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন Tier-1 এ অথবা Tier-1 & 2 দুটোতেই একসাথে । এককভাবে শুধু Tier-2 র জন্য কোন অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না । এছাড়া , জয়েন্ট অ্যাকাউন্টও এখানে খোলা যায় না । তবে নমিনি রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ এখানে আছে ।
প্রাথমিকভাবে 500 টাকা দিয়ে এই Tier-1 NPS অ্যাকাউন্ট চালু করতে হয় , যদিও এর কোন ঊর্ধসীমা অবশ্য নেই । তবে এখানে Tier-2 অ্যাকাউন্টের সে'রকম কোন ভূমিকা নেই । আয়করে ছাড় বা পেনশন ফান্ডের বৃদ্ধি - পুরোটাই হবে মূলত আপনার Tier-1 অ্যাকাউন্টে জমানো অর্থের উপর । Tier-2 অ্যাকাউন্ট অনেকটা ব্যাঙ্কের S.B. A/C. এর মতো কাজ করে । তাই NPS এ এই Tier-2 অ্যাকাউন্ট খোলাটা বাধ্যতামূলক নয় , কিন্তু Tier-1 অ্যাকাউন্ট অবশ্যই খুলতে হবে । তবে কেউ যদি মোট পেনশন কর্পাসের পরিমাণ বাড়াতে চান , তাহলে প্রাথমিকভাবে 1000 টাকা দিয়ে Tier-2 অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানেও টাকা রাখতে পারেন । এটা অনেকটা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মতো কাজ করবে তখন , এখান থেকে টাকা বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগ হবে । এখানে সঞ্চিত টাকা এখান থেকে যখন খুশি টাকা তোলা যাবে বা Tier-1 এ ট্রান্সফারও করা যাবে। এখানে কোন করছাড় নেই ( সরকারি কর্মীদের অবশ্য 80C তে এখানে শর্তাধীনে ছাড় মেলে) , বরং এখান থেকে অর্থাৎ Tier-2 থেকে টাকা তুললে , তার রিটার্ন করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হবে সেই বছর।
তাই Tier-2 অ্যাকাউন্ট সবার ক্ষেত্রে সমভাবে উপযোগী নাও হতে পারে। তাই এটা সাধারণত খুব হিসেবি ও দক্ষ ব্যক্তি ছাড়া কেউ খোলেন না । তবে Tier-1 আবশ্যিক অ্যাকাউন্ট NPS এর ক্ষেত্রে।
এই Tier-1 অ্যাকাউন্টে বছরে টাকা জমা দেবার মোট সংখ্যা এবং পরিমাণের কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই । তবে আয়করে ছাড় মিলবে বছরে সর্বোচ্চ 50,000 টাকা পর্যন্ত , 80 CCD(1B) ধারায় । এর ফলে উচ্চ ট্যাক্স ব্র্যাকেটে যারা আছেন ( 20% বা 30% স্ল্যাবে ) এবং 80C ধারায় করছাড়ের কোটা শেষ করে ফেলেছেন , তাদের ক্ষেত্রে এটা একটা লোভনীয় করছাড়ের উপায় ।
● NPS চালু থাকা অবস্থায় আংশিক উইথড্রয়াল:-
উপভোক্তা বিশেষ কারণে ( চিকিৎসা,সন্তানের বিবাহ,বাড়ি ক্রয় , উচ্চ শিক্ষা প্রভৃতি ) এই প্রকল্প চালু থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ তিনবার পর্যন্ত এই ফান্ড থেকে আংশিকভাবে টাকা তুলতে পারবেন , তাও সেটা সেই সময়ে সঞ্চিত কর্পাসের 25% বা তার কম অর্থ । তবে এটা অ্যাকাউন্ট খোলার তিন বছর পর থেকে করা যাবে , তার আগে নয়।
● রেগুলার পেনশন শুরুর প্রক্রিয়া :-
অনলাইন বা অফলাইনে উপভোক্তার নামে PRAN ও ID সহ উইথড্রয়াল ফর্ম জমা পড়লে , সেটা CRA দ্বারা প্রথমে প্রসেসড হবার পর , উপভোক্তা দ্বারা নির্বাচিত ASP (Annuity Service Provider) র কাছে সব ডকুমেন্ট পাঠিয়ে দেবে CRA দপ্তর।
ASP র তৎকালীন রেগুলেশন অনুসারে সব ডকুমেন্টেশন ঠিকঠাক থাকলে , এরপর CRA সরাসরি উপভোক্তার NPS অ্যাকাউন্টে থাকা অ্যানুইটি ফান্ডের টাকা ( মোট কর্পাসের 40% থেকে 60% পর্যন্ত) সেই ASP কে দিলেই তার পরের মাস থেকেই নির্দিষ্ট হারে নির্দিষ্ট স্কীমের পেনশন চালু হয়ে যাবে উপভোক্তার নামে। এছাড়া বাকি লাম্পসাম টাকাও ( 60%-40%) উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে জমা পরে যাবে তখনই ।
● Lock-in Period in NPS :-
NPS হল মূলত একটি পেনশন ফান্ড । উপভোক্তা সারা জীবন ধরে তার কষ্টার্জিত অর্থরাশি এই তহবিলে জমা রাখার পর , অবসর জীবনে উপভোক্তা এখান থেকে পেনশন পাবেন - এটাই হল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য । উপভোক্তার 60 বছর বয়স পর্যন্ত এখানে টাকা জমতে থাকে এবং তার উপর রিটার্নও জমতে থাকে । তাই সাধারণ ক্ষেত্রে 60 বছরের আগে এখান থেকে বেরোনো যায় না ।
তবে 'Pre-mature Exit' বলে একটি বিষয় আছে NPS এ , আগের পর্বেই তার উল্লেখ ছিল।
এখানে বলা আছে যে , একজন উপভোক্তা চাইলে তার 60 বছর বয়সের আগেই এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন । তবে এর জন্য তাকে কমপক্ষে 10 বছর এই প্রকল্পে সক্রিয় থাকতে হবে ।
এছাড়া , যদি কোন উপভোক্তা 60 বছর বা তার পরে এই প্রকল্পে যোগদান করেন , তার ক্ষেত্রে এই স্বাভাবিক লক্ ইন পিরিয়ড হবে তিন বছর । যদি তিনি প্রকল্পে যোগদান করার তিন বছরের আগেই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসতে চান , তাহলে সেটাকে দেখা হবে Pre-mature Exit হিসাবে । সেক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আছে ।
এগুলোকে আমরা এক কথায় লক্ ইন পিরিয়ড হিসাবে দেখতেই পারি , যদিও PFRDA এর ভাষায় এগুলো হল Pre-mature Exit এর কিছু পরিণাম।
তবে , যদি কোন উপভোক্তা 60 বছর বয়সের আগেই মারা যান , সেক্ষেত্রে পুরো অর্থরাশি বা কর্পাস ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে তার নমিনিকে বা তার আইনগত উত্তরাধীকারীকে ( Legal heir)। এখানে কোন অ্যানুইটি তাকে যেমন কিনতে হয় না , তেমনি তার পেনশনও হবে না । পরিবর্তে , 100% ফান্ডের টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে তার পরিবারকে ।
তবে সেই মৃত ব্যাক্তির নমিনি/উত্তরাধীকারী যদি চান , তাহলে তিনি পেনশনের জন্য অ্যানুইটি কিনতে পারেন সঞ্চিত কর্পাস থেকে। সেক্ষেত্রে ASP র থেকে অ্যানুইটি কিনতে হবে তাদের ।
● 'D-Remit' System in NPS :-
NPS প্রকল্পে এই D-Remit পদ্ধতির আগমন ঘটেছে অতি সম্প্রতি - 01/01/2020 তারিখ থেকে । তাই অনেকেই এখনো এই বিষয়টা নিয়ে অবগত নন । এটি উপভোক্তা-বান্ধব একটি বিশেষ সুবিধা , যা NPS এর মধ্যে আধুনিকতা ও দ্রুততা দুইই এনে দিয়েছে ।
এই D-Remit এর পুরো অর্থ হল Direct Remittance বা সরাসরি অর্থরাশি জমা হওয়া বা প্রদান করা ।
এটি একটি ইলেকট্রনিক পদ্ধতি , যার মাধ্যমে উপভোক্তার টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি ট্রাস্টি ব্যাঙ্কে জমা হয়ে যাবে , মাঝে কোন মধ্যস্থতাকারী বা দীর্ঘসূত্রীতা থাকবে না। এতে সময় যেমন বাঁচবে , তেমনি উপভোক্তার আর্থিক লাভও হবে ।
বিষয়টা একটু বিষদেই বলি । জানি না কতোটা সহজ ভাষায় এটা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পারব। তবুও চেষ্টা করছি।
■ সাধারণ ক্ষেত্রে উপভোক্তা যখন এই NPS তহবিলে কোন টাকা জমা দেন , তখন সেটা তার NPS অ্যাকাউন্টে অনেকটা ঘুর পথে এসে জমা হয় , তারপর সেটা ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে বিভিন্ন ইউনিটে বিনিয়োগকৃত হয় । এখানে T+2 days সময় লাগে ( T মানে হল ট্রানজাকশান ডে ) পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ হতে।
অর্থাৎ , ধরুন , আমি যদি আজকে কোন কন্ট্রিবিউশন জমা করি আমার NPS অ্যাকাউন্টে , তার প্রতিফলন আমি দেখতে পাব আজ থেকে তিনদিন পর অর্থাৎ চতুর্থ দিনে । এই তিনদিন কিন্তু আমার জমা করা টাকাটা কোথাও ইনভেস্টেড হল না , বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ঘুরতে থাকল , অথচ তার দরুণ কোন সুদ বা রিটার্ন পাওয়া গেল না ।
এই দেরির মূল কারণই হল , এখানে টাকাটা অন্তর্বর্তী ব্যাঙ্ক ঘুরে তারপর Axis ব্যাঙ্কে অর্থাৎ ট্রাস্টি ব্যাঙ্কে যাচ্ছে । এর পর ট্রাস্টি ব্যাঙ্ক সেই টাকা আমার ঠিক করা ফান্ড ম্যানেজারের ( PFM) অ্যাকাউন্টে দেবে এবং তারপরেই সেটা নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসে ( E-C-G) শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা হবে । এটাই হল T+2 এর রহস্য ।
এই দীর্ঘসূত্রীতা কম করে একদিনেই বা সেইদিনেই যদি টাকাটা শেয়ার বাজারে ইনভেস্টেড হত , তাহলে উপভোক্তার লাভ হতে পারত , তার ফান্ড ম্যানেজার সেই দিনের NAV ( Net Asset Value) অনুসারে ইউনিট ক্রয় করতে পারত ।
এটাই এবার নিয়ে আসল PFRDA এবং NPS Trust তাদের এই D-Remit ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ।
এখানে দীর্ঘসূত্রীতা কমানোর ব্যবস্থা করা হল । উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট আর ট্রাস্টি ব্যাঙ্কের ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টকে সরাসরি যুক্ত করে দেওয়া হল । এতে money transfer আরো দ্রুত হল । তবে এর সুবিধা অবশ্য সেই উপভোক্তাই পাবেন , যিনি eNPS এ নেট ব্যাঙ্কিঙের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে থাকেন।
এর জন্য আপনাকে একটি Virtual A/C. তৈরি করতে হবে Axis ব্যাঙ্কের সঙ্গে। eNPS পোর্টালের মাধ্যমেই এই ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে উপভোক্তাকে । রেজিস্ট্রেশন সব দিক থেকে সফল হলে , এর একদিন পরেই রেজিস্টার্ড ইমেল মারফৎ আপনার কাছে সেই Virtual A/C. নম্বরটি চলে আসবে , সাথে থাকবে Axis ব্যাঙ্কের অন্যান্য তথ্য ( যেমন- IFSC) । এবার আপনি আপনার নেট ব্যাঙ্কিঙে গিয়ে বেনিফিসিয়ারি হিসাবে এই ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টটাকে যুক্ত করুন ।
এরপর থেকে আপনার এই নেটব্যাঙ্কিং থেকেই সেই বেনিফিসিয়ারির ( Axis Bank) ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টে NEFT/RTGS করে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারবেন ।
আপনি যদি যে কোন কাজের দিন সকাল 9 টা 30 মিনিটের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় আপনার NPS অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠান NEFT/RTGS করে , তাহলে সেই দিনই আপনার টাকা সেই দিনের NAV অনুসারে শেয়ার বাজারের বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে বিনিয়োগকৃত হয়ে যাবে আর আপনি এর প্রতিফলন পরের দিনই দেখতে পাবেন আপনার পোর্টফোলিওতে। অর্থাৎ , আপনার টাকা সরাসরি সেই দিনই অ্যাসেট ক্লাসের ইউনিট কেনার জন্য ব্যবহৃত হল ।
একেই বলা হচ্ছে ' Same Day NAV ' ।
এটাই হল D-Remit পদ্ধতির একটি বড়ো সুবিধা । এছাড়াও , আরো একটি সুবিধাও এতে হচ্ছে - সেটা হল SIP ।
■ এই D-Remit নামক ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে বর্তমানে NPS ব্যবস্থাতেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মতোই এসে গেছে SIP বা Systematic Investment Plan ।
নেট ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সাহায্য নিয়েই ব্যাঙ্ককে যদি আপনি অনলাইন স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশন ( S.I.) দিয়ে রাখেন যে প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে NPS এর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ auto-debit হবে , তাহলে সেটা এক প্রকার SIP ই হয়ে গেল । এটাও এখন করতে পারেন আপনি ।
এইভাবে ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে D-Remit ব্যবস্থা NPS তহবিলের আমূল পরিবর্তন এনেছে ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.